মহাদেবপুরে কৃষক মাঠ স্কুলে ৫’শ চাষীর দিনবদল

  17-09-2020 03:49PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : দেশের উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ‘কৃষক মাঠ স্কুলে’। এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা এ স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করছেন। এখানে হাতে-কলমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পরিচয় করানো হয় উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের সাথে। সকালে মাঠের কাজ শেষে বিকেলে স্কুলে আসেন কৃষকরা।

পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষক মাঠ স্কুল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উপজেলার কয়েক শত কৃষাণ-কৃষাণি। কৃষকের বাড়ির আঙিনায় চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। লালন-পালন করা হচ্ছে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি। গৃহস্থালি কাজের সাথে ফলের গাছ লাগানোর মাধ্যমে জোগান হচ্ছে পুষ্টি ও পতিত জলাশয়ে মাছ চাষ করে মিলছে আমিষ। ফসল আবাদে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ছে ফলন। এতে কৃষক পরিবারের পুষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নের সাথে সাথে আসছে বাড়তি আয়। এ স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেক কৃষকের দিন বদলে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুরে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম শুরু করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (আইএফএমসি-২) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার দুলালপাড়া, গোপালপুর, চকহরিবল্লভ, বিলশিকারী, কুড়াইলসহ বিভিন্ন গ্রামে ১০টি কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। ছয় মাস মেয়াদে প্রতিটি স্কুলে ৫০ জন করে মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পাঠদান করা হচ্ছে। তাদের সপ্তাহে একদিন তিন ঘণ্টা করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা এবং উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের সাথে পরিচয় করানো হয়। কৃষক মাঠ স্কুলে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণে তৃণমূলে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন ‘কৃষক মাঠ স্কুল’ পরিদর্শন করেন আইএফএমসি-২ প্রকল্পের ফিল্ড কোঅডিনেটর ড. মুনির আহম্মেদ ও মাস্টার ফ্যাসিলেটর জয়ন্ত রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায়, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্মা তৌফিক আল জুবায়ের প্রমুখ।


কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আগে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে লোকসান হয়েছে। এখন দিন বদলে গেছে। কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে অধিক উৎপাদন ও কীটনাশক ব্যবহার না করে রোগবালাই দমনের বিষয় শিখেছি। তিনি বলেন, পাখি ডেকে আনা যে কৃষিকাজের অংশ, কৃষক মাঠ স্কুলে না পড়লে জানতে পারতাম না।

তিনি আরও বলেন, আইএফএমসি মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণে অনেক বিষয় জেনেছি। সে অনুযায়ী ফসল করে লাভবান হচ্ছি। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় কি, উপকারি পোকা কি, ফসলের কোন রোগের কি চিকিৎসা, কোথায় কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, সে বিষয়গুলো আমরা জেনেছি এই স্কুলে।

গৃহবধূ জায়েদা বেগম বলেন, ওই স্কুলে পড়ে পারিবারিকভাবে খামার করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও গবাদিপশু পালন সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকদের স্কুলে শেখানো হচ্ছে কৃষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থায় ধান-সবজিসহ সব ধরনের চাষাবাদেও কৌশল। স্কুলে শেখানো কৃষিপ্রযুক্তির শিক্ষা মাঠে প্রয়োগ করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন