মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হাসি

  21-01-2022 04:49PM

পিএনএস ডেস্ক: শীতের সোনাঝরা রোদে মাঠজুড়ে যেন ঝিকিমিকি করছে হলুদ ফুলের সমারোহ। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য্য। দেখে মনে হয় হলুদ বরণে সেজেছে প্রকৃতি।সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকনে ভারাক্রান্ত মনটিও আনন্দে ভরে উঠবে। হিমেল বাতাসে সরিষা ক্ষেত ছুঁয়ে মন মাতানো গন্ধ পৌঁছে দিচ্ছে লোকালয়ে। সেই গন্ধ যেমন সবাইকে আকৃষ্ট করছে, তেমনই বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। এ সরিষা ক্ষেত নানা প্রজাতির মাছি-মৌমাছি ও প্রজাপতির গুনগুনে মুখরিত থাকে সবসময়।

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। যেকোন অবস্থাতাইে থাকুক না কেন, সুন্দরের কদর তারা করবেই। যদি সেই সৌন্দর্যটি আবার সু-ঘ্রাণযুক্ত হয় তাহলে তো আরো বেশি আকৃষ্ট হয় করে সেই সুন্দরের পূজারীদের। সরিষা ক্ষেতে অপার সৌন্দর্য আর ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পিপাসুদের টেনে নিয়ে যায় হলুদের চাঁদরে। প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে হলুদ-সবুজের মিতালী সরিষা ক্ষেতে।

অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এমনি চিত্র দেখা যায় লক্ষ্মীপুর সদরের লাহারকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠগুলো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৬০, রায়পুরে ৮২৫, রামগঞ্জে ৪৫, রামগতি ২৫ ও কমলনগর ৪০ হেক্টর জমি। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৬৯০ মেট্রিক টন। সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের।

সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ মানানসই। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথাই বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোন এক মুরব্বি। শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা।

মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি ‘নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের’ সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা ক্ষেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁফিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। হাত-পা-সূড়গুলো ফুলের সঙ্গে গেঁথে এক-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও।

আবিরনগর গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. ইয়াছিন বলেন, এই মৌসূমে আমাদের গ্রামে সরিষার চাষ করা হয়। শুকনো হওয়ায় সরিষা ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যাওয়া আঁকা বাঁকা পথটি স্কুলে যেতে আমরা ব্যবহার করি। সরিষা ফুলগুলো দেখতে সুন্দর। এর ঘ্রাণও খুব ভালো লাগে।

সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলতে আসা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ডিগ্রি পড়ুয়া ছাত্র মো. ফারভেজ হোসেন বলেন, সরিষা ক্ষেত দেখতে খুব সুন্দর। ফুলের ঘ্রাণ বেশ মনোমুগ্ধকর। এজন্য এখানে বন্ধুকে নিয়ে ছবি তুলতে এসেছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, অন্যান্য জেলার তুলনায় লক্ষ্মীপুরে সরিষা চাষ কম হয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সময় মত একটু পরিচর্যা করলে চলতি মৌসুমে সরিষা উৎপাদন ভালো হবে। এবছর আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে। এতে বাম্পার ফলন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার।

তিনি আরো জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরিষার বীজ, সার ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করেছি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন