বোম্বাই মরিচে স্বাবলম্বী নীলগঞ্জের শতাধিক কৃষক

  14-10-2022 09:07AM



পিএনএস ডেস্ক : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে বোম্বাই মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক কৃষক। এক সময় ঘরোয়া চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির আঙিনায় ও ঘরের কোণে বোম্বাই মরিচের দু-একটি গাছ লাগানো হতো।

এখন দেশে-বিদেশে চাহিদা থাকায় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপকভাবে মরিচ চাষ শুরু হয়েছে।

এ অঞ্চলের মরিচের ঘ্রান ও গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রতিবছর এখান থেকে চাহিদা মতো মরিচ কেনেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা, লাভবানও হচ্ছেন।

সচ্ছলতা ফিরে এসেছে ইউনিয়নের প্রতিটি কৃষকের ঘরে। অন্যান্য কৃষিকাজের চেয়ে বোম্বাই মরিচ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় অনেকেই মরিচ চাষ করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলাপাড়া উপজেলার আটটি গ্রামে বোম্বাই জাতের মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক কৃষক। এদের মধ্যে কয়েকজন হয়েছেন লাখপতি। এই ইউনিয়নের কুমির মারা, মজিদপুর, এলেমপুর, বাইনতলা, ফরিদগঞ্জ, ডামুরতলা, ঘৌটা বাছা ও নাও ভাঙ্গা গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচের চাষ হচ্ছে। এ জাতের মরিচ চাষে যথেষ্ট লাভ হওয়ায় আকৃষ্ট হচ্ছেন কৃষকরা।

১০ বছর আগে মজিদপুর গ্রামের কৃষক জাকির মুন্সী বোম্বাই মরিচের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। তিনি গেল কয়েক বছরে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় আড়াই হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন বোম্বাই মরিচ আবাদ হয়েছে। এবার রবি শস্য মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থানে মরিচের পাঁচটি প্রদর্শনী ক্ষেত তৈরি করা হয়। ৩০ শতকের প্রতিটি ক্ষেতে সরকারি খরচে উন্নত জাতের মরিচের বীজ, সারসহ চাষাবাদের অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এর পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বীজ বপন থেকে শুরু করে মরিচ শুকানো পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে গেছেন।

কৃষক জাকির মুন্সী বলেন, ২০১৩ সালে বোম্বাই মরিচ চাষ শুরু করি। আমি ইউটিউব দেখে গ্রিন হাউসের আদলে তৈরি করি বেড। প্রথমে আমার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি প্রতি বছর তিন থেকে চার লাখ টাকার বোম্বাই মরিচ বিক্রি করি।

এক বিঘা জমিতে রোপণ করা হয় প্রায় তিন হাজার চারা। গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ৭ দিন পর পর মরিচ তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি ক্রেতাদের কাছে প্রতি হাজার মরিচ ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কৃষক সুলতান গাজী বলেন, বোম্বাই মরিচ প্রতি সপ্তাহে তুলি। গত সপ্তাহে আমি ১৩ হাজার টাকা বিক্রি করছি। আমরা কলাপাড়ার পাখিমারা বাজারে বিক্রি করি। সেখান‌ থেকে পটুয়াখালী, বরিশাল, ঢাকা পর্যন্ত চলে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়, অতিরিক্ত খড়া হয়। ইউটিউবে দেখে গ্রিনহাউস করি। তবে তাদের মতো উন্নত মানের গ্রিনহাউস করার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু বাঁশ দিয়ে খুটি বানিয়েও আমরা মোটামুটিভাবে এখানে বোম্বাই মরিচ চাষ শুরু করেছি। আমার এখানে ৪ শতক জায়গা হবে। তবে প্রতি করায় এখানে আমার খরচ গিয়েছে ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার টাকার মতো মরিচ বিক্রি করেছি।

কৃষক আনোয়ার সিকদার বলেন, ২০১৮ সাল থেকে মরিচ চাষ শুরু করেছি। এতে লাভবান হয়েছি। আমাদের সংসার মোটামুটিভাবে চলে যাচ্ছে। মরিচ চাষ করলে বোঝা মাথায় নেওয়া লাগে‌ না। কষ্ট কম, দূরে যাওয়া লাগে না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা আমাদের বাড়িতে এসে নগদ টাকা দিয়ে নিয়ে মরিচ নিয়ে যান। ধানের চেয়ে মরিচ চাষে লাভ বেশি।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.আর.এম সাইফুল্লাহ জানান, কলাপাড়া উপজেলায় কৃষকরা বোম্বাই মরিচ চাষ করে প্রচুর লাভবান হচ্ছেন। যেহেতু বোম্বাই মরিচের গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে, এ জন্য ফলনও পাওয়া যায় দীর্ঘদিন। এছাড়াও এর বাজার মূল্য ভালো এবং নিকটস্থ বাজারেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করা যায়। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে এই মরিচ চাষে সহযোগিতা করছেন।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরজমিন গবেষণা বিভাগ পটুয়াখালীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালীতে চাহিদার চেয়ে কৃষি উৎপাদন কম হয়। তবে খুশির সংবাদ হচ্ছে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদন হয়। সাধারণত এই অঞ্চলে খরিপ এক মৌসুমে শাক-সবজি উৎপাদন করা যায় না।

কারণ পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না, তবে এই অঞ্চলের কৃষকরা জমি উঁচু করে তার ওপরে পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে সেই ছাউনির নিচে বোম্বাই মরিচ চাষ করেন। বোম্বাই মরিচ চাষ অনেক লাভজনক। প্রায় বছরখানেক ফসল পাওয়া যায়। সে কারণেই কৃষকরা বোম্বাই মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে বোম্বাই মরিচের চাষ করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা টাকার ওপরে লাভ করতে পারেন।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন