ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কা

  26-01-2022 10:19AM



পিএনএস ডেস্ক: ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে একদিকে যেমন বিরাজ করছে চরম মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে রয়েছে রিজার্ভের সংকট ও ক্রমবর্ধমান বহিঃঋণের চাপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাত। সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা শ্রীলঙ্কার। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনীতির এ ভয়াবহ অবস্থা কাটাতে ভারত ও চীনের কাছে আরও ঋণ চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার ক্রমবর্ধমান বহিঃঋণ দেশটিকে আরও কঠিন সংকটের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, চলমান সংকট মোকাবেলায় স্বল্পস্থায়ী সমাধান খুঁজতে গিয়ে কলম্বো নিজেকে দীর্ঘমেয়াদি এক ঋণজালে জড়িয়ে ফেলছে। বিষয়টি সামনের দিনগুলোয় দেশটির অর্থনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে।

চলতি মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরে আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সে সময় তার কাছে শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঋণসহায়তা চেয়ে অনুরোধ করা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ঋণসহায়তার অনুরোধ বলা হলেও এটি ছিল আসলে ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধ। এছাড়া চীন থেকে পণ্য আমদানি বাবদ প্রদেয় অর্থ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়। গত বছর শ্রীলঙ্কায় মোট ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে চীন।

পশ্চিমা পর্যবেক্ষক মহলে এখন চীনের তথাকথিত ‘ঋণফাঁদের’ গভীরে শ্রীলঙ্কার ক্রমেই জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাদের ভাষ্যমতে, কলম্বোকে ঋণফাঁদে ফেলে শ্রীলঙ্কায় নিজের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়িয়ে তুলেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরে নিজের কৌশলগত অবস্থানকে দৃঢ় করে তুলছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় চীনের ঋণসহায়তা নিয়ে হইচই বেশি হলেও বর্তমানে সম্ভাব্য সব স্থান থেকেই ঋণসহায়তা আদায়ের চেষ্টা করছে কলম্বো। আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে চীনের বৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছ থেকেও প্রচুর পরিমাণে ঋণসহায়তা নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা।

চলতি সপ্তাহেই নয়াদিল্লির কাছ থেকে শিগগিরই ১৫০ কোটি ডলারের সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিএল পেইরিস গত রবিবার এ তথ্য জানান। তার ভাষ্যমতে, ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কলম্বোর জন্য ঋণসহায়তা প্যাকেজ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে।

সম্প্রতি আইএমএফের কাছ থেকে বেলআউট প্যাকেজ গ্রহণ করার এক প্রস্তাব শ্রীলঙ্কার সরকার প্রত্যাখ্যান করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটির কাছ থেকে এ সহায়তা গ্রহণ করা নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভায়ও এক ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জিএল পেইরি বলেন, ঋণসহায়তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) যোগাযোগের সম্ভাবনা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আইএমএফের সদস্য হিসেবে শ্রীলঙ্কার জন্য সংস্থাটির দুয়ার এখনও খোলা রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, রিজার্ভের তীব্র সংকট সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা এখনো একেবারে তলিয়ে যায়নি।

চলতি মাসেই রিজার্ভ তহবিলের সংকট মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের কারেন্সি সোয়াপের ঘোষণা দেয় ভারত। একই সঙ্গে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার সাড়ে ৫১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধেরও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারত থেকে সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভে আপাতত রক্তক্ষরণ থামানো গেলেও দেশটির অর্থনীতিতে বিপদের ছায়া এখনও কাটেনি।

এছাড়া নয়াদিল্লি অন্যান্য ব্যালান্স অব পেমেন্ট সহায়তার পাশাপাশি শতকোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজেরও ঘোষণা দিয়েছে। এ ঋণসহায়তার অর্থ শ্রীলঙ্কায় খাদ্য সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি দেশটিতে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও ওষুধ আমদানিতে ব্যবহার করা হবে।


তবে এসব সহায়তা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বিপদকে কাটিয়ে তুলতে কতটা সক্ষম হবে, সে বিষয়ে খোদ লংকান সংবাদমাধ্যমগুলোও সন্দিহান। চলতি বছর সব মিলিয়ে শ্রীলংকার মোট ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এএনআই, ইকোনমিক টাইমস

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন