ভরা মৌসুমেও উর্ধ্বগতি চালের বাজার

  19-05-2022 02:00PM

পিএনএস ডেস্ক : গত বছর থেকে অস্থিরতা লেগেই আছে চালের বাজারে। বছরের ব্যবধানে দফায় দফায় বেড়েছে চালের দাম। ধানের ভরা মৌসুমে আসলেও থেমে নেই দাম বাড়ানো। যেখানে দাম কমার কথা, সেখানে বিভিন্ন অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। আর এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।

সাধারণ মানুষ মোটা চাল খেয়ে বেঁচে থাকে। সে মোটা চালের দামই বেড়েছে বস্তায় ২৫০ টাকা। এতে করে বিপাকে পড়েছে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ধান-চাল মজুত করে রাখার কারণে উর্ধ্বগতি চালের বাজার। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা নজরদারিতে রয়েছে, কেউ দাম বৃদ্ধি করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া জিরাশাইল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়, ১ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাইজাম স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা, ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা, ১ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পারিজা এখন ২ হাজার ২৫০ টাকায়, ২ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৩৫০ টাকা ও চিনিগুঁড়া বস্তায় ৫০০ টাকা বেড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোহাগ মিয়া নামে একজন বলেন, আয়ের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। অন্যান্য পণ্যের দাম আগে থেকেই বৃদ্ধি। সরকারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিযে জরিমানা করেন। কিন্তু তারপরেও অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারের অবস্থা অস্থির করে রেখেছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা না হলে জীবন-জীবিকা ভালোভাবে চালানোটাই মুশকিল হয়ে যাবে।

খাতুনগঞ্জের কয়েকজন পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, চালের দাম উঠা-নামা করে এটা ঠিক, কিন্তু ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে গেছে তা আমি আমার ব্যবসার বয়সে দেখেনি। এত বছর মিল মালিকরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও সেখানে এখন আধিপত্য বিস্তার করছে বড় বড় শিল্পগ্রুপ। প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনে মজুত করছে তারা। এ কারণে সরবরাহ থাকলেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন বলে দাবি তাদের।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এবং খাতুনগঞ্জ চাল পট্টির সভাপতি এনামুল হক এনাম বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লুটছে। এ সময়ে চালের দাম বাড়াটা অপ্রত্যাশিত।

বিগত কয়েক বছরে এমনটা হয়নি। তবে এ বছর শিল্প গ্রুপগুলো প্যাকেট জাতের উদ্দেশ্যে ধান-চাল মজুত করার কারণে সরবরাহ কম হচ্ছে। এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীলরা মাঝেমধ্যে বেফাঁস কথা বলার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। মানুষ এখন আগের মত বোকা নাই। তারাও টেলিভিশন দেখে। কে কি বলে তার ওপর বিত্তি করে সুযোগ নিতে চেষ্টা করে।

গতকাল রাতে সরকারে একজন দায়িত্বশীল টকশোতে বললেন, বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ৪০ টাকা পেঁয়াজের দাম বেশি না। সকালে দেখি ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৪৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এসব বেফাঁস কথা বন্ধ করতে হবে। সরকারে দায়িত্বশীলদের সচেতনের পাশাপাশি আরও কঠোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, প্রতিদিন তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযোগ পেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় নেওয়া হচ্ছে। কেউ তেলের মত চাল মজুত করে বাজারের পরিস্থিতি খারাপ করতে চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে কোন পণ্যই ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। কারা চালের বাজার অস্থির করে তুলছে, সমস্যাটা আসলেই কোথায়? সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। সূত্র ; আরটিভি নিউজ

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন