ওয়াটার বোর্ডের ইউটার্ন (পর্ব-২) ■ বাড়ছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডার জালিয়াতি ■ নন সিডিউল আইটেম ব্যবহার করে ইজিপি জালিয়াতি

  15-11-2021 03:49PM

পিএনএস (মো: শাহাবুদ্দিন শিকদার): পাউবো কখনো বালিশ কান্ড বা পর্দা কান্ড করেনি। দেশের বিদ্যমান অন্যান্য ইঞ্জিনিযারিং ইউনিটের তুলনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে দুর্নীতি ও অনিয়ম একেবারেই কম। ২০০৯ সালের পর থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। তার কারণ, সরকার প্রধান স্বয়ং এই খাত সম্পর্কে ব্যাপক খোঁজ-খবর রাখেন। অপরদিকে, দুর্নীতির ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে পাউবো’র সকল কাজে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় প্রকৌশলীর অস্বচ্ছতার কারণে, পাউবো’র ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই সমস্ত প্রকৌশলীরা প্রভাবশালী মহলের নাম ব্যবহার করে দরপত্র জালিয়াতির অব্যাহত রেখেছে।

পর্যবেক্ষকমহলের মতে, ইজিপি দরপত্র প্রবর্তনের পরে দরপত্র জালিয়াতি প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি পাউবো’র উত্তরাঞ্চলের একটি জোনে একজন প্রধান প্রকৌশলী এবং দুইজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিলে দুই ডিভিশনের দু’জন তরুণ প্রকৌশলীকে ব্যবহার করে দরপত্র জালিয়াতির যাত্রা শুরু করেছে। এই দুইটি ডিভিশনে নন সিডিউল আইটেমের অপব্যবহার করে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অনেক ঠিকাদারের সাথে রীতি মতো প্রতারণা করা হয়েছে। কারণ নন সিডিউল আইটেমে যে দর নির্ধারিত হয়েছে তা শুধু পছন্দের ঠিকাদারদের জানানো হয়েছে। অন্যান্য ঠিকাদারগণকে নন সিডিউল আইটেমের দর জানানো হয়নি। ফলে কাজ পেয়েছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের মদদপুষ্ট ঠিকাদারগণ। এতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র বাধাগ্রস্থ হওয়ায় সরকারী অর্থের ব্যাপক শ্রাদ্ধ হয়েছে যা অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক।

তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের ঐ জোনের কর্তাবাবুরা জোনের অপর দুইটি ডিভিশনের দু’জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে অপব্যবহার করে তাদের ক্যারিয়ারের অনেক ক্ষতি করেছেন। উত্তরাঞ্চলের এই জোনের কর্তাবাবু প্রভাবশালী মহলের নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি করেন। নির্বাহী প্রকৌশলীদের তিনি বলে বেড়ান, অমুক কাজ চেয়েছে। তমুক কাজ চেয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীদের এই ধরনের প্রভাবশালী মহলে সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব নয় বিধায় তারা অন্ধকারেই থাকেন এবং জোনের কর্তাবাবুদের বেআইনী আদেশ পালনে বাধ্য হন। তবে পরবর্তীতে দুদক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, গণমাধ্যম এবং প্রশাসনিক তদন্তের মুখোমুখি হতে হয় নির্বাহী প্রকৌশলীদের। আজকাল জোনের কোন কোন কর্তাবাবু নির্বাহী প্রকৌশলীদের মতো ক্ষমতা পালন করছেন অথচ বিপদে দায়িত্ব নিচ্ছেন না।

তবে এই ধরণের বেআইনী দরপত্র জালিয়াতির সময় যে সমস্ত প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করা হয় তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রভাবশালীরা এই ধরণের কোন নির্দেশ কর্তাবাবুদের প্রদান করেননি। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় উপমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিব যখন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন তখন এই ধরণের অপতৎতার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাহায্য নিয়ে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরী এবং এই সমস্ত দুর্নীতিবাজদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ, এই সমস্ত দূর্নীতিবাজ অফিসারদের পাহাড় সমান সম্পত্তি রয়েছে। অনেকের জিজ্ঞাসা, তাদের আর কতো লাগে? (চলবে)


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন