ওয়াটার বোর্ডের ইউটার্ন (পর্ব-৩) ■ হাওর ট্র্যাজেডীর 'মাস্টার মাইন্ড' এখন ‘মৌয়াল’ ■ সংশোধন করার এখনই সময়-

  20-11-2021 01:00PM

পিএনএস (মো: শাহাবুদ্দিন শিকদার): ২০০৭ সালের হাওর ট্র্যাজেডীর ‘মাস্টার মাইন্ড’ হিসেবে কুখ্যাত প্রকৌশলী এখন মৌয়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মৌমাছি যেমন তিল তিল করে মধু সংগ্রহ করার পর মৌয়াল কৃত্রিম ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছিদের তাড়িয়ে মৌচাকের সব মধু ছিনিয়ে নিয়ে যায় ঠিক তেমনি এই প্রকৌশলী মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের এধার-ওধার করে সব কিছু নিজেই উদরস্থ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিপিপি প্রণয়নের পর যখন একটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখে তখন বাপাউবো’র দক্ষিণাঞ্চলের এই কর্তা বাবু নড়েচড়ে বসেন। দরপত্র আহবানের সময় এলে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর গায়ে দুর্নীতি বা অন্য কোন রং মাখিয়ে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প থেকে সরিয়ে তিনি টেন্ডারবাজির রাবণ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। দরপত্র চলাকালে ঠিকাদারদের তার অফিসে ডেকে এনে দরপত্র জালিয়াতি করেন। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, দক্ষিনাঞ্চলের দুর্নীতিবাজ এই প্রকৌশলী দরপত্র জালিয়াতি কালে কোন কিছুই তোয়াক্কা করেন না। এমনকি পাউবো’র মহাপরিচালক কর্তৃক অনুমোদিত এস্টিমেটও তিনি বদলে ফেলেন। বাপাউবো’র সাবেক একজন মহাপরিচালক কর্তৃক অনুমোদিত এস্টিমেট ছিড়ে ফেলে তাঁর মনগড়া এস্টিমেট সংযুক্ত করেন। ‘‘তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হতে পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চ ঘাট হতে বরিশাল জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা’’ শীর্ষক প্রকল্পে এই এস্টিমেট পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। বাপাউবো’র সর্বোচ্চ কর্মকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত এস্টিমেট দক্ষিণাঞ্চলের এই চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কোন সাহসে পরিবর্তন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী এখানেই থেমে থাকেননি বরং যে দায়িত্ব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিপালন করার কথা সেখানেও তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।দেখা গেছে, ৩০ কোটি টাকার বেশী প্যাকেজের টেন্ডার ইভালুয়েশান কমিটি ( TEC) যেখানে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হওয়ার কথা সেখানে তিনি তা নিজেই অনুমোদন করেছেন বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। গুরুতর অভিযোগটি যাচাই করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের কর্তাবাবু এই দুর্নীতির কাজে সহয়তা করে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী যিনি একই সাথে নজিরবিহীনভাবে একটি প্রশাসনিক চেয়ারেও বসে আছেন। এই উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পটুয়াখালীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় মাটির কাজের প্রি-ওয়ার্ক এস্টিমেটে ব্যাপক দুর্নীতি করার পড়ে তৎকালীন টাস্কফোর্স কর্তৃক ধরা পড়ায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট থেকে এপিআর (এসিআর) না নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর নিকট থেকে এপিআর আদায় করে নিয়ম ভঙ্গ করেন। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী বাপাউবো’র কর্মচারী উন্নয়ন পরিদপ্তরে অভিযোগ করলেও দক্ষিণাঞ্চলের কর্তাবাবুর সাথে তার দহরম মহরম থাকায় কেউ তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। দক্ষিণাঞ্চলের কর্তাবাবু এবং এই উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এখন দক্ষিণাঞ্চলের দূর্নীতির মানিকজোড় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

সূত্র মতে, দক্ষিণাঞ্চলের এই কর্তাবাবু অতীতে যতোগুলো স্টেশনে কাজ করেছেন ততোগুলো স্টেশনেই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বগুড়া ও পাবনায় তার দুর্নীতির কৃতকর্ম এখনো লোকজনের মুখে মুখে। বাপাউবো’র শৃঙ্খলা পরিদপ্তরে তার পাপকাহিনী এখনো জমে আছে যা এখনো তদন্তের দাবী রাখে। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর ও পর্যালোচনা অব্যাহত আছে। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের কোন ডিভিশনে দরপত্র আহবান করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে পায়তারা করে বদলি করেন। তদ্বির করেন উপর মহলে। নানা রকম বদনাম রটিয়ে দেন। ঠিকাদারদের ডেকে দরপত্রের নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে কাজ প্রদানের জন্য অনৈতিক চাপ দেন।

অভিজ্ঞমহল মনে করে, পাউবো’র স্বচ্ছতার স্বার্থে আলোচিত এই দুর্নীতির তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা তথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন