পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনা - (পর্ব-২) : হাওর অঞ্চলে শুধুমাত্র পিআইসি বাঁধ এবং সন্নিহিত অঞ্চলে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব-

  06-09-2022 05:18PM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : হাওর অঞ্চলে শুধুমাত্র পিআইসি বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ একেবারেই অসম্ভব। অন্যদিকে, শত শত কোটি টাকার স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করে নদীর ভাঙন প্রতিরোধ করা সত্যের অপলাপ মাত্র। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্প গ্রহন করা হলে সেখানে আনুপাতিক হারে ড্রেজিং করার অনুশাসন জারী করেছেন যা নদী শাসন ও ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বর্তমান মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় উপমন্ত্রী এবং সম্মানিত সিনিয়র সচিব প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনকে সামনে রেখেই প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যথাযথ নির্দেশনা ও মনিটরিং অব্যাহত রেখেছেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৬২ সাল থেকে হাওরে সুনির্দিষ্ট উচ্চতায় পিআইসি বাঁধ নির্মাণ করে থাকে। এই বাঁধগুলোর উচ্চতা কি রকম হবে তা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সুনির্দিষ্ট ডিজাইন অনুসারে করা হয়ে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওর অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের প্রকৌশলীদের কারিগরী প্রস্তাবনা এবং পাউবো’র পরিকল্পনা ও ডিজাইন ইউনিটের ডিজাইনের আলোকে এই পিআইসি বাঁধ নির্মাণ করা হয়ে থাকে। কারিগরী ও ডিজাইনের পরামর্শ উপেক্ষা করে বাঁধের উচ্চতা যথেচ্ছ বৃদ্ধি করার কোন সুযোগ নেই। এরকম করা হলে, হাওর অঞ্চলের পরিবেশ , প্রতিবেশ এবং ভূ-প্রকৃতির সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জী থেকে নেমে আসা ঢলকে ধারণ করার জন্যই হাওর সৃষ্টি করেছেন। এই হাওরগুলো চেরাপুঞ্জী থেকে নেমে আসা ঢলকে ধারণ করে। এই হাওরগুলো যদি কোন কারণে পানি ধারণ করতে না পারে তাহলে হাওর অঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এবং কুমিল্লায় আগাম বন্যা হতে পারে। এই সমস্ত কারণেই পাউবো সুনির্দিষ্ট উচ্চতায় পিআইসি বাঁধ নির্মাণ করে থাকে।

ভূ-প্রকৃতি তথা প্রতিবেশ ভেদে পিআইসি বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণ করেন পাউবো’র দক্ষ প্রকৌশলীগণ । উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভূ-প্রকৃতির কারণে ছাতক উপজেলায় কোন কোন পিআইসি বাঁধের উচ্চতা ১২ মিটার পর্যন্ত করা হয়ে থাকে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পিআইসি বাঁধের উচ্চতা ক্ষেত্রবিশেষে ৮ মিটার হয়ে থাকে। অন্যান্য জায়গায় পিআইসি বাঁধের উচ্চতা সাধারণতঃ ৬.৫ মিটার হয়ে থাকে। এই উচ্চতার চেয়ে বেশী উচ্চতার পিআইসি বাঁধ নির্মাণ করা হলে হাওরে পানি প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এতে করে হাওরগুলোর স্বাভাবিক চরিত্র বা প্রকৃতি নষ্ট হবে। হাওর অঞ্চলের মৎস্য প্রজনন ও পরিভ্রমণের পরিবেশ বিনষ্ট হবে। হাওর অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রা ও চলাচল বিঘ্নিত হবে। সুতরাং কোন ক্রমেই পিআইসি বাঁধের যথেচ্ছ উচ্চতা বৃদ্ধি করা যাবে না। সেক্ষেত্রে আগাম বন্যার পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে তার জন্য ড্রেনেজ সিস্টেমকে উন্নীত করার লক্ষ্যে হাওর অঞ্চল এবং সন্নিহিত অঞ্চলের নদী-খাল দ্রুত খনন করা অত্যাবশ্যক।

অপরদিকে, হাওর অঞ্চলের বড় বড় নদীগুলোতে শুধুমাত্র শহর রক্ষা বাঁধ তথা বেড়ী বাঁধ নির্মাণ করে সমস্যা মোকাবেলায় টোটকা ব্যবস্থা গ্রহন করলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হতে পারে। শহর রক্ষা বাঁধ ও বেড়ী বাঁধ নির্মাণের চেয়ে সংশ্লিষ্ট নদীগুলো খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ড্রেজিং বিষয়ক অনুশাসন অনুসরন করতে হবে। আর এটা করতে গিয়ে অযথা আইডব্লিউএম এবং সিইজিআইএস নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দীর্ঘ ধর্ণা দিয়ে বসে থাকার চেয়ে পাউবো’র মাঠ পর্যায়ের কারিগরী প্রস্তাবনা এবং পরিকল্পনা ও ডিজাইন ইউনিটের পরামর্শ স্বাপেক্ষে দ্রুত ডিপিপি প্রণয়ন করে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন