স্বর্ণ ব্যবসার আগে চুরি-ছিনতাই করতো আরাভ খান, করেছেন একাধিক বিয়ে

  19-03-2023 11:59PM

পিএনএস ডেস্ক : আট বছর আগে শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতে গিয়েছিলেন রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খান। গুলি ভর্তি রিভলবারসহ শ্বশুরের বাসার সামনে থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেছিলেন ডিবি পশ্চিমের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের উপ-পরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালতে বিচারাধীন। এখন পর্যন্ত চার্জশিটভুক্ত ২০ সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ারসহ বাকি সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

জানা গেছে, আরাভ খানের শ্বশুরের তালিকায় শুধু সেকেন্দর আলী নন, তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। সেকেন্দর আলীর মতো অন্যান্য শ্বশুরদেরও একইভাবে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন তিনি। মামলার এজাহারে এমনটাই উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী পুলিশের উপ-পরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ডিএমপির পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব-উর রশিদ সংবাদ পান যে, আদালতে বিচারাধীন শাহআলী থানায় দায়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি রবিউল ইসলাম আপন জামিনে মুক্ত হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় মগবাজারের আমবাগানে তার শ্বশুরবাড়ির সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন।

সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মাহবুব উর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ৩ তলা বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ দেখামাত্র উপস্থিত লোকজনের সামনে দৌড়ে ওই বাড়ির নীচতলায় প্রবেশ করেন তিনি। উপস্থিত লোকজনসহ পুলিশ ওই বাড়ির নীচ তলায় গিয়ে পলায়নের চেষ্টারত ঐ ব্যক্তিকে আটক করে সবার সামনে তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জানান তার নাম রবিউল ইসলাম আপন। তাকে দৌড়ে পলায়নের কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিউল ইসলাম আপন স্বীকার করেন যে, তিনি তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য গুলি ভর্তি রিভলবারসহ এই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য এই ঘরে প্রবেশ করে গুলিভর্তি রিভলবারটি রেখে দেন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলভার যা বাটসহ লম্বা অনুমান আট ইঞ্চি। লম্বায় আনুমানিক আড়াই ইঞ্চি ব্যারেলের ওপর বাম পাশে খোদাই করা ৮২০৩ (8203) ও ইন জাপান (IN JAPAN) লেখা আছে। আর ট্রিগার এবং ফায়ারিং পিনও সচল।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তিনি ইতোপূর্বে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছে। তিনি ভয়ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করতেন। এ ঘটনায় আসামি আপনের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯৫ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের ১ মার্চ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই বছরের ১০ মে আদালত রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এই মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান রবিউল। এরপর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে। আগামী ২৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ারের সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাক্ষী দিতে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন পেয়েছি। নির্ধারিত দিনে সাক্ষী দিতে আমি আদালতে যাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জানান, আরাভ খানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সবগুলো মামলায় তিনি পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। যেসব মামলা সাক্ষ্যের জন্য আটকে আছে, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সেগুলোতে সাক্ষী হাজির করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করি শিগগিরই সেসব মামলা নিষ্পত্তি হবে।

এদিকে দুবাইয়ে সোনা ব্যবসায়ী ও পুলিশের পরিদর্শক হত্যা মামলার আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম আপনের দুবাইয়ে একটি সোনার দোকান উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এরপর থেকে আরাভ খানকে নিয়ে দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। গুঞ্জন রয়েছে, সদ্য অবসরে যাওয়া পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহযোগিতায় আরাভ খান নাম বদলে নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দেশ ছেড়ে পালান।

বুধবার (১৫ মার্চ) দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন সাকিব। তবে উদ্বোধনী মঞ্চে না উঠে ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান তিনি। একই অনুষ্ঠানে যোগ দেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে (৩৪) পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খান।

মামুন হত্যার ঘটনায় তার ভাই ডিএমপির বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২০১৯ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলার এজাহার অনুযায়ী আরাভের আসল নাম রবিউল ইসলাম আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। মামলায় আপনের ঠিকানা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন