পিএনএস (মো: শাহাবুদ্দিন শিকদার): পাউবোর দরপত্র জালিয়াতি এবং টেন্ডারবাজি রুখে দিতে সরকারের প্রণীত ইজিপি পদ্ধতি যুগান্তকারী অবদান রেখেছে। কিন্তু কিছু দরপত্র জালিয়াত এবং দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী সরকারের এই সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে ভেজাল সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে।
দেখা গেছে, ই-টেন্ডার জালিয়াতি করে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী পছন্দের অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দিতে গিয়ে অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। এভাবে অযোগ্য ঠিকাদাররা কাজের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে। এমনও দেখা গেছে, একটি প্রকল্পে একজন ঠিকাদার ৫/৬ প্যাকেজ কাজ নিয়ে বসে আছে। ৫/৬ প্যাকেজের আর্থিক মূল্য গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২০০/২৫০ কোটি টাকা। অথচ বড় প্যাকেজ ভেংগে ছোট করার সময় বলা হয়েছে, এতো বড় কাজ একজন ঠিকাদারের পক্ষে সময় মতো সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বিধায় প্যাকেজ ছোট করা হয়েছে। বাস্তবে, প্যাকেজ ছোট করার মূল কারণ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিকে এড়ানো। কারণ চীফ ইঞ্জিনিয়ার /ডিজি পর্যায়ে দরপত্র অনুমোদন করাতে পারলে দুর্নীতি করার সুযোগ বেশী থাকে। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয় বিধায় ফাইল আটকে যায় এবং রিটেন্ডারের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে দেখা যায়, মাটির কাজের প্যাকেজগুলো এমন করে ছোট করা হয় যাতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, চীফ ইঞ্জিনিয়ার /ডিজি পর্যায়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। এব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা একেবারেই অন্ধকারে রাখে। এই ভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টেন্ডার অনুমোদন করিয়ে দুর্নীতিবাজ কিছু প্রকৌশলী বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছে। এমনকি, কোন কোন প্রকৌশলী মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করেও ঘুষ লেনদেন করেছে যার প্রমাণ মন্ত্রনালয়ের কাছে রয়েছে। কোন কোন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করেও ঘুষ নেয়ার রমরমা প্রচারণা রয়েছে।
অভিজ্ঞমহলের মতে, পাউবোর সকল প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এই ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সব মিলিয়ে ১৫/২০ জন প্রকৌশলী এই ধরণের অপরাধ করে থাকে। বাদবাকী প্রকৌশলীরা আপেক্ষিক ভাবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রতি ব্যাচে ৪/৫ জন মহাদুর্নীতিবাজ অফিসার রয়েছে। তাদেরকে সকলেই চিনেন। তাদের সম্পর্কে সকলেই জানেন। কিন্তু তারা সব সময় প্রাইজ পোস্টিং পেয়ে থাকে। অথচ তাদের কারণে পাউবোর ইমেজ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। দীর্ঘদিনে পাউবোর দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা আস্কারা পেয়ে যাচ্ছে। এরকম ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, "দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন" নীতিকে অনুসরণ করে কিছু দুর্নীতিবাজ অফিসারকে শাস্তির আওতায় আনা গেলে পাউবোর ইমেজ বৃদ্ধি পেতে পারে।
পাউবোর ই-টেন্ডারে ভেজাল-(পর্ব-২)
14-06-2023 04:19PM