টানা তিন মাস প্রবাসী আয় কমেছে

  04-10-2021 01:16AM

পিএনএস ডেস্ক: চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরেও কমেছে রেমিট্যান্স। আগের দুই মাসেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বৈদেশিক আয়। সবমিলে তিন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪১ কোটি ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়েও রেমিট্যান্স এসেছিল ৬৭১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এ তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৩১ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

আবার হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে যে হারে দেশে এসেছেন, সে তুলনায় লোক কম যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমে থাকতে পারে বলে সংশ্নিষ্টদের ধারণা। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিও কমেছে। তবে বেড়েছে আমদানি। যে কারণে ডলারের দর বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই রোববার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বেচা-কেনা হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, করোনার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খারাপ ছিল। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবার পাচার প্রবণতা বেড়ে থাকতে পারে। ফলে মাঝে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানো অনেকে আবার হুন্ডি কারবারিদের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। এছাড়া গত অর্থবছরে করোনা শুরুর পর কাজ হারিয়ে কিংবা আতঙ্কের কারণে অনেকে জমানো টাকা নিয়ে দেশেও ফিরেছিলেন।

যে হারে লোক দেশে এসেছে, সে তুলনায় নতুন করে বিদেশে গেছে অনেক কম। আবার সাধারণভাবেই হঠাৎ করে কোনো কিছুতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলে পরবর্তীতে কমে। সবমিলে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির পর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত থাকলেও এবার কমে থাকতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা মোট ১৭৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার। এর মানে গত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বা ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের এ রেমিট্যান্স গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩২ কোটি ডলার। সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪০ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ৭৬ লাখ ডলার। এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। যা মোট রেমিট্যান্সের ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এসেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ডলার বা ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, করোনার কারণে প্রবাসীদের অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। যে হারে দেশে ফিরেছেন, নতুনভাবে যেতে পেরেছেন সে তুলনায় অনেক কম। এছাড়া আরেকটি অন্যতম কারণ বেশি রেমিট্যান্স আসে এ রকম দেশগুলো এখনও পুরোপুরি আগের অবস্থায় যেতে পারেনি। তবে ইতোমধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা ফিরবে বলে আশা করা যায়।

গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সে সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আবার করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরাদের অনেকেই সব সঞ্চয় নিয়ে এসেছেন। কেউ-কেউ দেশে কিছু করবেন এই আশায় সব সঞ্চয় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান। যেখানে আগের অর্থবছর এসেছিল এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এ হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আগে কখনও এক অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

করোনার মধ্যে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত ২৪ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে বর্তমানে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়লেও রপ্তানি কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এখন আবার ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে রিজার্ভ কমে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৪৬ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এতে করে ডলারের দর ব্যাপক বেড়ে আন্তঃব্যাংকেই রোববার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায়। যদিও গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন