৩০ বছরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ

  02-12-2021 03:26PM

পিএনএস ডেস্ক : মাত্র ৩০ বছরের ব্যবধানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সূত্র জানায়, পোশাক শিল্পের অগ্রগতি, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি ও দ্রুত নগরায়নের ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাফল্য এসেছে। সেই সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিকাশ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণ ও সামাজিক কার্যক্রম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিআইডিএস’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। একই ক্ষেত্রে ভারতের কাছাকাছিও চলে গেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। অথচ এখন সেটা ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ৩ দশমিক ২৬ হারে বাড়তো, এখন কমে ১ দশমিক ১৪ হারে বাড়ছে। একইভাবে ৯০’র দশকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এটা এখন আরো কমে শূন্য দশমিক ৮৬ হয়েছে। অথচ মাথাপিছু আয়ে ৯০ দশকে পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এখন পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু আয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উৎপাদন খাতে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০’র দশকে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা এখন হয়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ উৎপাদন খাতে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। একই সময়ে ভারতে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অথচ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে উৎপাদন খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। ৯০’র দশকে এ খাতে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

শুধু উৎপাদন খাত নয়, নগরায়নেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০’র দশকে বাংলাদেশের নগরায়ন হার ছিল ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ভারতে একই সময়ে নগরায়নের হার ছিল ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, এখন দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাকিস্তানের নগরায়নে ওই সময়ে হার ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা এখন হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ভারত ও পাকিস্তানকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলার অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। ৯০’র দশকে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে নারী উপস্থিতির হার ছিল ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে নারীর উপস্থিতি ছিল ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে, পাকিস্তানে কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবুও বাংলাদেশ সমান হতে পারেনি।

বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ভারতের তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরালা যেভাবে এগিয়েছে, উত্তর প্রদেশ ও বিহার সেভাবে এগোয়নি। এটা যেন ভারতের মধ্যে অন্য ভারত। ব্যাপক আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। আবার পাকিস্তানের ইসলামাবাদে যে উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে বেলুচিস্তানে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে এমন বৈষম্য নেই। দেশ স্বাধীনের আগে যেমন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য ছিল। এখন সেরকম নেই। তবে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্য আর নারায়ণগঞ্জের দারিদ্র্য এক নয়। এটা হয়েছে এলাকার কারণে। যেমন- নদী ভাঙা, উপকূলীয়, হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। এটা করাটাও কঠিন। অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, কমিনিউনিটি ক্লিনিক, হাওর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পে আমি বেশি নজর দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। এসব কারণে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ যেসব প্রকল্প সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেবে সেগুলোকে উপরে রাখছি। বিআইডিস স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন