ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এমডির পদত্যাগ

  23-08-2022 10:29PM

পিএনএস ডেস্ক : কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভুঁইয়া।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ডিএসই চেয়ারম্যান বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অক্টোবরের শেষে তার পদত্যাগ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে পদত্যাগপত্রে। ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল সোমবার ডিএসই থেকে ১২৭ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে জিএম থেকে সিনিয়র জিএম পদে দুজন, ডিজিএম থেকে জিএম পদে তিনজন, এজিএম থেকে ডিজিএম পদে তিনজন, সিনিয়র ম্যানেজার থেকে এজিএম পদে ১৯ জন, ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার পদে ১৫ জন, ডেপুটি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার পদে ২৯ জন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ২৯ জন এবং এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ১০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

এছাড়া জুনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ পদে ৬ জন, সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে একজন, অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে দুই জন, জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একজন এবং জিএসএস থেকে জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৬ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

এ পদোন্নতি দিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েন ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূইয়া। অভিযোগ ওঠে এনআরসিকে (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) বাদ দিয়ে এমডি একক সিদ্ধান্তে তিন কর্মকর্তাকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) থেকে জিএম করেছেন। ডিএসইর নিয়ম অনুসারে ডিজিএম পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে এনআরসির সুপারিশ লাগে। কমিটি যাচাই বাছাই করে পদোন্নতির সুপারিশ করে।

ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমন পদোন্নতি দেয়ায় গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এমডি তারেক আমিন ভূইয়াকে তোপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি পর্ষদ সভার একটা পর্যায়ে তাকে সভায় না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে এমডির অনুউস্থিতেই পর্ষদ সভার ওই অংশ অনুষ্ঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে একদিন না যেতেই পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ডিএসইর এমডি।


সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূইয়া যেভাবে চাচ্ছিলেন, সেভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। আবার ডিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ বিভিন্নভাবে তাকে অসহযোগীতা করছিলেন। এমনকি পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ থেকেই বিভিন্নভাবে তারেক আমিন ভূঁইয়া’র ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। সব কিছু মিলেই পদত্যাগপত্র জমা দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন ডিএসইর এমডি।

পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারেক আমিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

আর ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এমডি মহদয় আজ একটি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এতে তিনি অক্টোবরের শেষে পদত্যাগের কথা বলেছেন।

এমডি কেন পদত্যাগ করলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, উনি পদত্যাগ করেছেন অনেকটাই ব্যক্তিগত কারণে। হয় তো তিনি এখানে কাজ করতে কমফোর্টেবল ফিল করছিলেন না। হয় তো উনি যেভাবে কাজ করতে চাচ্ছেন, সেইভাবে পারছেন না। এসব মনে করে উনি মনে করেছেন পদত্যাগ লজিকাল। তবে আমরা তাকে পদত্যাগ করতে বলিনি।

এখন কি এমডির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তার পদত্যাগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি আমরা বোর্ডে পর্যালোচনা করবো। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সোমবার বোর্ড সভায় একটি অংশ এমডিকে না রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বোর্ড সভায় এমডি ছিলেন। তবে সভার একটি অংশ তিনি ছিলেন না। কারও বিষয়ে সমালোচনা তার সামনে করলে সেটা দেখতে খারাপ দেখায়। ওই অংশটায় তিনি ছিলেন না। পরবর্তীতে রেজাল্টটা (সভার আলোচনা) তাকে জানানো হয়েছে।

ডিএসইর কর্মকর্তাদের যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এখন তার কি হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিএসইর নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির একটি অংশ ওনার (এমডি) এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না, সেটা পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। আর বাকিগুলোর মধ্যে অর্গানোগ্রামে পদ নেই, তবু পদোন্নতি হয়েছে, এগুলো এনালাইসিস করতে হবে।

গত বছরের জুলাই মাসে তিন বছরের জন্য ডিএসই’র এমডি হিসেবে নিয়োগ পান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তারিক আমিন ভূঁইয়া। তিনি বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে পেলেও এক বছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন