পিএনএস ডেস্ক: গত অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়ে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখালেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ গত অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে আয় করেছে ৩৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি তাদের প্রকাশিত তথ্যে দেখিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, নিট পোশাকের রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, ওভেন পণ্যের আয় কমেছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ওভেন পণ্য থেকে আয় হয়েছে ১৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ১৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
পোশাক শিল্পের আয় কমার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পোশাকের ইউনিটের দাম কমে যাওয়া। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কার্যাদেশের কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতাও লক্ষণীয়।
কেন কমছে পোশাক রপ্তানি?
‘আমি মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের এ হিসাব ঠিক আছে এবং আমাদের তথ্যের সঙ্গে যায়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম যে পোশাক খাত ভালো নেই। প্রকৃত চিত্র এবার উঠে এসেছে।’-দাবি করেন নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বাড়ায়নি। ফলে রপ্তানিকারকরা পোশাক পণ্যের ক্রয় আদেশ নিতে পারেননি।’
‘ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়া এবং কাস্টমস ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে সামগ্রিক ব্যাবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আমরা প্রতিযোগীদের কাছে দুর্বল হয়েছি এবং ক্রয় আদেশ নিতে পারিনি।’- দাবি করেন হাতেম।
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় কমা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এসএম মান্নান কচির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রপ্তানিমুখী পোশাক পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কারণ শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য। ফলে আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মূল্য সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছি না। এমনই সংকটময় মুহূর্তে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়েছেন। ফলে রপ্তানিতে ছন্দপতন হয়েছে।’
রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সামনের মাসগুলোতেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
যে কারণে প্রকাশ করা হয়নি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি আয়
বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রপ্তানি তথ্যে গরমিল ধরা পড়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি তথ্য দেয়নি ইপিবি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ইপিবি সাধারণত রপ্তানির তথ্য সরবরাহ করে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডাটা প্রসেস করার পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি দাঁড়ায় ৫৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম ছিল। প্রচলিত হিসাব অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তীসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে উল্লেখিত তথ্যে গরমিল ধরা পড়ায় তা আর প্রকাশ করা হয়নি।
রপ্তানিমুখী পোশাক পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কারণ শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য। ফলে আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মূল্য সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছি না।- বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বড় ধরনের ফারাক ধরা পড়ে। পরবর্তীসময়ে একই পণ্যের একাধিক ইনপুট, একই এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোডের দুবার হিসাব ও অন্য দ্বিত্ব গণনা বাদ দিয়ে পুনরায় হিসাব করায় গত অর্থবছরের রপ্তানি আয় কমে ১০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। ইপিবির প্রাথমিক আয় ৫৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন থেকে ১০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বাদ দেওয়ার পর রপ্তানি আয় দাঁড়াতে পারে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশে।
সাধারণত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু এবছর গরমিল পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে এবং বেশ কিছু কারণ খুঁজে পায়।
এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একই রপ্তানির তথ্য এবং একই পণ্যের এইচএস কোড একাধিকবার ইনপুট দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পণ্যের কাটিং মেকিং এবং স্কিমিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু তৈরির মাশুল হিসাব হওয়ার কথা, কিন্তু কাপড়সহ সব যন্ত্রাংশের হিসাব করেছে। এছাড়া এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন থেকে দেশীয় শিল্পে যে পণ্য রপ্তানি খাতে বিক্রি করা হয় তা দুবার হিসাব করার কথা অনেকে উল্লেখ করেন।
রপ্তানি আয়ের তথ্যের গরমিল দূর করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
১১ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫.২ শতাংশ
26-07-2024 09:45PM