তারল্য সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকে বহুমুখী পদক্ষেপ

  15-09-2024 11:02PM

পিএনএস ডেস্ক: সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোয় তারল্য সহায়তা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কলমানি মার্কেটেও লেনদেন বেড়েছে। এ বাজার থেকেও ব্যাংকগুলো ধার নিচ্ছে। এছাড়া এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আমানতও নিচ্ছে। এর বাইরে আমানতের সুদহার বাড়িয়ে বাড়তি আমানত সংগ্রহের উদ্যোগও নিয়েছে। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট মোকাবিলার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, ৯টি ব্যাংক আগে থেকেই তারল্য সংকটে ভুগছে। নতুন করে আরও দুটি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। এখন ১১টি ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। সংকটের কারণে এসব ব্যাংক গ্রাহকদের নিয়মিত চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না। এতে গ্রাহকরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।

৫ আগস্টের আগে বিগত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওইসব ব্যাংককে বিশেষ অর্থের জোগান দেওয়া হতো। নতুন সরকার এসে সে সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে ছাপানো টাকায় আর কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোকে তারল্যের জোগান নিতে হলে তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন ট্রেজারি বিল বা বন্ড বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হবে। কিন্তু ১৩ ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বন্ধক রাখার মতো ট্রেজারি বন্ড বা বিল নেই। যে কারণে তারা ওইসব বিল-বন্ড বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা নিতে পারছে না। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট আরও বেড়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ১১টি ব্যাংক তারল্য সংকট বেশি মাত্রায় মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে ওরিয়ন ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণ দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটি ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে টেন্ডারের মাধ্যমে কিনে নিয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি কোম্পানি। কিন্তু ব্যাংকের সাবেক মালিকপক্ষ ওরিয়ন গ্রুপের মামলার কারণে মালয়েশিয়ান গ্রুপটি কোনো মূলধনের জোগান দিতে পারছে না। যে কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে ঋণের প্রায় শতভাগই খেলাপি। যে কারণে ঋণ আদায় থেকে কোনো আয় আসছে না। এ কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

এস আলম গ্রুপের দখল করা সবকটি ব্যাংকেই তারল্য সংকট চলছে। ওইসব ব্যাংক দখল করে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। ঋণের নামে দেশ থেকে অর্থ পাচার করা হয়েছে। সম্প্রতি এসব ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকে আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ আমানত সংগ্রেহ বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এতে এ দুটি ব্যাংক তারল্য সংকট মোকাবিলায় অনেক দূর এগিয়েছে।

অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদও আমানত সংগ্রহে আকর্ষণীয় মুনাফার আমানত সংগ্রহ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া তারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত সংগ্রহে বেশি জোর দিয়েছে।

এদিকে আন্তঃব্যাংকে ও কলমানি মার্কেটে লেনদেন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত সরকারের আমলে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন কমতে শুরু করেছিল। কোনো কোনো মাসে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার কোটি টাকাও আন্তঃব্যাংকে লেনদেন কমেছিল। আন্তঃব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে সময়মতো ফেরত দিতে না পারায় সবল ব্যাংকগুলো ধার দেওয়া কমিয়েছিল।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আন্তঃব্যাংকে লেনদেন আবার সচল করার উদ্যোগ নেন। কিছু ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক থেকে ধার দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত তিনটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য গ্যারান্টি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলো পর্যালোচনা করছে।

কলমানি মার্কেটেও লেনদেন বেড়েছে। আগে দৈনিক লেনদেন ৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। এখন তা বেড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একদিনের জন্য ধার পাচ্ছে। এছাড়া স্বল্প ও মেয়াদি ধারের প্রবণতাও বেড়েছে। রোববার ব্যাংকগুলো স্বল্প ও মেয়াদি ধার দিয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। কলমানিতে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছে ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় আগের ধার সমন্বয় করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নতুন পেয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এভাবে আগের ধার সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই নতুন ধার পাচ্ছে।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন