'বোনাস ৫% এ বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্য অভিন্ন থাকলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়বে'

  18-06-2022 11:13AM


পিএনএস ডেস্ক : নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট ভবনে ১৬ জুন ‘আন্তর্জাতিক ফ্যামিলি রেমিট্যান্স দিবস’ উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, লিগ্যাল পদ্ধতিতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্যে ডলারের মূল্যবান অভিন্ন করতে হবে এবং প্রেরিত অর্থের ওপর বোনাস আড়াই পার্সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ৫ পার্সেন্ট করতে হবে। এছাড়া, প্রবাস-প্রজন্মকে বিনিয়োগের সুবিধা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শাখা স্থাপন করতে হবে। কন্স্যুলেট এবং দূতাবাসে বিনিয়োগ সম্পর্কিত উইং চালু করতে হবে-যাতে প্রবাসে থেকেই প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

“রেমিট্যান্স এবং উন্নয়ন” শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ সহিদুল ইসলাম প্রধান অতিথি ছিলেন। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশের রেমিট্যান্স এজেন্সির প্রতিনিধিসহ নিউইয়র্কে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, সংস্কৃতি ও মিডিয়া অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোঃ সহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বিশদভাবে উল্লেখ করেন। ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী-বান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের বর্ণনা করে তিনি প্রবাসীদেরকে বৈধ পথে আরও রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও সুবিধা সমূহ আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে যেখানে অধিকসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে সেখানে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির উপর জোর গুরুত্বারোপ করেন। রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর অবদানের কথা উল্লেখ করে তাদের সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। বাংলাদেশ - যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘পিপল টু পিপল রিলেশন’কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে অভিহিত করে, দু’দেশের মধ্যকার সহযোগিতাকে আরো গভীর ও শক্তিশালী করণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত সহিদুল।


অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিউয়র্কস্থ সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও সিইও দেবশ্রী মিত্র। তিনি তার উপস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের হাল-নাগাদ চিত্র তুলে ধরেন এবং এ প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের প্রদত্ত নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার বর্ণনা করেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো বৈধভাবে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনা শতকরা ২ থেকে ২.৫ ভাগে উন্নীতকরণ।

উম্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত প্রবাসী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রেমিট্যান্স প্রবাহ সহজীকরণ ও ত্বরান্বিত করার বিষয়ে তাদের স্ব স্ব মতামত ও চিন্তা ভাবনা তুলে ধরেন। তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনাসমূহ কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে প্রচার-প্রচারণা চালানো, রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করা, রেমিট্যান্স সপ্তাহ বা মেলার আয়োজন করা, ওয়েজ আর্নার বন্ডের সুবিধাসমূহ যাতে প্রবাসীরা সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন। ইতিমধ্যেই সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে ঢাকায় গমনের পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গভীর এক হতাশা নিয়ে ফিরে আসার কথা সবিস্তারে উপস্থাপন করেন কম্যুনিটি লিডার ও আওয়ামী লীগ নেতা মোর্শেদা জামান এবং যুক্তরাষ্ট্রস্থ ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটার্নস’ এর প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ।

যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এ সময় বলেন, প্রবাস প্রজন্মকে বাংলাদেশ মুখী করতে হলে বিনিয়োগের যাবতীয় কার্যাদি যুক্তরাষ্ট্রে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্যে নিউইয়র্কে সোনালী ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ একটি শাখা এবং কন্স্যুলেট/দূতাবাসে বিনিয়োগ উইং স্থাপন করতে হবে। এমন প্রস্তাবনা অনেক আগে থেকেই নীতি-নির্ধারকদের অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সীমাহীন উদাসীনতা এখনও দূর হয়নি। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে আরো ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন এবং ড. প্রদীপ কর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সামাদ আজাদ প্রমুখ। সুধীজনদের মধ্যে আরো ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে লিগ্যাল ওয়েতে রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন প্লাসিডের সিইও ডা. কামাল, বিএ এক্সপ্রেসের সিইও আতাউর রহমান, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের সিইও এম এ মালেক এবং সানম্যানের সিইও মাসুদ রানা তপন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা, বিশেষ করে এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রেমিট্যান্সের অপরিসীম অবদানের কথা দৃঢ়তার সাথে ব্যক্ত করেন। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায়-একদিকে করোনা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব ও অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি- রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী বলে কনসাল জেনারেল যোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ রূপকল্প এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে তিনি প্রবাসীদেরকে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক ফ্যামিলি রেমিট্যান্স দিবসটি এমন এক সময় উদযাপিত হচ্ছে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক সপ্তাহ পালন করছে, যা আজকের অনুষ্ঠানের এক নতুন গুরুত্ব ও মাত্রা যোগ করেছে বলে কনসাল জেনারেল মন্তব্য করেন।



পিএনএস/আনোয়ার



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন