নতুন ভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়

  21-01-2020 12:07PM

পিএনএস ডেস্ক: চীনে গত ডিসেম্বর থেকে দেখা যাওয়া এই নতুন ভাইরাস মূলত ফুসফুসে বড় ধরণের সংক্রমণ ঘটায়। চীনা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে যে অন্তত তিনজন এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে আরও অন্তত ২শ’ জন। খবর: বিবিসি বাংলা।

যদিও কিছু স্বাস্থ্য বিশ্লেষকের ধারণা যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দু’হাজারের কাছাকাছি।

ভাইরাসটিকে এক ধরণের করোনাভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটি একটি কমন ভাইরাস যা নাক, সাইনাস বা গলার উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায়। কিন্তু এই ভাইরাস সংক্রমণ কতটা উদ্বেগজনক এবং কতটা দ্রুত ছড়ায় এই ভাইরাস?

রহস্যময় ভাইরাস আরো ছড়িয়েছে, বাংলাদেশে সতর্কতা
চীনে করোনাভাইরাস কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে?
শত শত শিশুর এইডস হওয়ার পেছনের কারণ এখনো অজানা
যৌন ভাইরাস এইচপিভি নিয়ে যত লজ্জা-অজ্ঞতা
কোথা থেকে এলো এই ভাইরাস?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ভাইরাসটি উৎস কোনও প্রাণী। যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারি বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।

করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে তবে এ ধরণের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ সেটি নতুন।

বেশিরভাগ করোনাভাইরাসই বিপজ্জনক নয় কিন্তু আগে থেকে অপরিচিত এই নতুন ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

কী কী লক্ষ্মণ দেখা যায়

রেসপিরেটরি লক্ষ্মণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষ্মণ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেককে সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে যা ২০০০ সালের শুরুতে প্রধানত এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো ।

নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক উলহাউস বলেন, আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষ্মণগুলো কতটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা ফ্লুর মতো কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়।

কত দ্রুত ছড়াতে পারে এই ভাইরাস?

ডিসেম্বরে উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল এবং এ পর্যন্ত মারা গেছে তিন জন।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ হলো লুনার নিউ ইয়ার বা চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষ্যে যখন লাখ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে, সেই সময়ে নতুন এই ভাইরাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকবে।

দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডও এ নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর নিশ্চিত করেছে।

লন্ডনে ইমপেরিয়াল কলেজের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তারা মনে করেছে ইতোমধ্যেই এক হাজার সাতশ মানুষ নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

এটি কি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে?

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার কিছু ঘটনাঘটেছে। সিঙ্গাপুরের ডিউক-নুস মেডিকেল স্কুলের ওয়াং লিন ফা সম্প্রতি উহান সফরে করে এসেছেন।

তিনি বলছেন মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের লক্ষ্মণগুলোর দিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে।

‘চাইনিজ নিউ ইয়ার আসছে। চীনে অন্তত ৪০ কোটি মানুষ এ সময় ভ্রমণ করবে বিভিন্ন জায়গায়। প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন। এটার দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের।’

আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো যাবে কিভাবে

ইতোমধ্যেই সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি পার হওয়া পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই উহান প্রদেশের সেই মাছের বাজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।

মানুষজনকে অরক্ষিত প্রাণী থেকে সাবধানতার পাশাপাশি ডিম ও মাংস রান্না এবং ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

চীনা নববর্ষের সময় যারা ভ্রমন করবে তাদের শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা আছে কিনা সেটি দেখা হবে। উহান থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রীনিং শুরু করেছে সিঙ্গাপুর ও হংকং।

যুক্তরাষ্ট্রও বড় বিমানবন্দরগুলোতে একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের সাথে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ থাকায় বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেও।

বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আমার কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত

ওয়েলকাম ট্রাস্ট এর ড. জোসি গোল্ডিং বলেন, নতুন করে সংক্রমণের খবর না পাওয়া পর্যন্ত এটা বলা কঠিন যে এ মূহুর্তে আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

‘সার্সের বিষয়টা আমাদের ভালোভাবেই মনে আছে এবং সেজন্যই বেশি ভয় হচ্ছে। কিন্তু এখন আমরা অনেক বেশি প্রস্তুত এ ধরণের রোগের সাথে লড়াই করার জন্য।’

নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জোনাথন বল বলছেন, আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এ কারণে যে যেকোনো ভাইরাসই মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।আর একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসকে সে সুযোগ দেয়া উচিত নয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন