পালমোনারি ফাইব্রোসিস প্রতিরোধে ফুসফুসের যত্ন জরুরি

  04-06-2022 02:46PM



পিএনএস ডেস্ক : করোনাভাইরাস আসার পর থেকে যে রোগগুলো এসেছে তা সবার কাছে পরিচিত। এর মধ্যে অন্যতম পালমোনারি ফাইব্রোসিস। করোনা পরবর্তী সমস্যা হিসেবে এটি এখন বেশ পরিচিত। জীবনযাপনে ঠিক কতটা ক্ষতি করতে পারে এটি তার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

ফাইব্রোসিস শুধু ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে তা নয়, ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতিও করে। করোনার পরে অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, ধূমপায়ী এমন কি আগে ধূমপানের অভ্যেস থাকলে তারাও পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।

পালমোনারি ফাইব্রোসিস কি?

পালমোনারি ফাইব্রোসিস একধরনের রোগ যেখানে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে ফুসফুসের কলাগুলো (টিস্যু) মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলো ঠিকমত কাজ করতে পারে না। তখনই শুরু হয় শ্বাস নেওয়ার সমস্যা।

ভারতের পালমোনোলজিস্ট ডা. অনির্বাণ নিয়োগী বলেন, ‘ফুসফুসের সমস্ত সংক্রমণই ঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে শেষ পর্যন্ত ফাইব্রোসিসে পরিণত হয়। আমাদের ত্বক কেটে গেলে যেমন স্কার হয়, তেমনই শরীরের ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলোতে, বিশেষ করে ফুসফুসে সংক্রমণ হলে সেই অংশ নষ্ট হয়ে গিয়ে স্কার টিসু তৈরি হয়।’

এই স্কার টিসুগুলো বাতাস ও ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ফলে রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন প্রবেশ করা ক্রমশ দুরূহ হয়ে পড়ে। কার্বন ডাই অক্সাইডও বেরোতে পারে না। ফলে তৈরি হয় সমস্যা।

পালমোনারি ফাইব্রোসিস একটিই অসুখ এটা মনে করলে কিন্তু ভুল করা হবে। ডা. নিয়োগী জানান, কমপক্ষে ২০০ রকমের ফুসফুসের অসুখকে ফাইব্রোসিসের আওতায় আনা যায়। আবার, সম্পূর্ণ ফাইব্রোসিসের বিষয়টি পড়ে ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজের (আইএলডি) আওতায়। ফুসফুসের দেওয়ালে কোনও রকম সংক্রমণ হলেই তাকে আইএলডি বলা চলে। তবে, যে আইএলডিতে ফুসফুসে স্কার টিসু তৈরি হয় সেটিই ফাইব্রোসিস নামে পরিচিত হয়।

সাধারণত, এই অসুখের কারণকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়—

১. ইডিয়োপ্যাথিক :

বেশির ভাগ সময় কোনও কারণ ছাড়াই ফাইব্রোসিস হতে পারে। একে আর এক ভাবে বলা চলে ক্রিপ্টোজেনিক ফাইব্রোজিং অ্যালভিওলাইটিস। অনেক ক্ষেত্রে জিনগত কারণ বা বংশগত ধারা হিসেবে ফাইব্রোসিস হতে পারে। ইডিয়োপাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস বা আইপিএফ প্রাণঘাতীও হতে পারে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না শুরু করলে এক সময়ে বিছানাবন্দি হয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে।

২. অটোইমিউন :

অটোইমিউন ডিজিজের কারণে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হতে পারে। হাত ও মুখের চামড়ার পরিবর্তন, শরীরে গাঁট ফুলে যাওয়া দেখে অনেক সময় চিকিৎসকেরা শনাক্ত করতে পারেন।

৩. রেডিয়েশন বা অন্য অসুখের জন্য :

টিবি, কোভিড, নিউমোনিয়া, ক্যানসার ও অন্যান্য অসুখের ‌ফলে, কোনও বিশেষ ওষুধ ব্যবহারে ও ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপির ফলে হতে পারে।

৪. পরিবেশগত ও পেশাগত :

পরিবেশের ধুলো, মোল্ড, প্রাণিজ কিছু থেকে ও পেশাগত ভাবে সিলিকা, অ্যাসবেস্টস ও কয়লা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের হতে পারে সংক্রমণ।

ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হতে পারে। তবে, সূচনা হয় শুকনো কাশি দিয়েই। ডা. নিয়োগী বললেন, ‘চল্লিশোর্ধ্ব কারও যদি এক মাসেরও বেশি শুকনো কাশি চলে ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ ছাড়া কিছু উপসর্গ—

ওজন হ্রাস

ক্লান্তি

শ্বাসকষ্ট

পেশিতে টান ও পেশির ক্লান্তি

গাঁটে গাঁটে ব্যথা

পালমোনারি ফাইব্রোসিসের সে ভাবে চিকিৎসা এখনও নেই। এটাকে প্রতিরোধ করাও কঠিন। কিছু ওষুধ ব্যবহার করা চলে, তবে সেগুলোও আংশিক ভাবে কাজ করে। চিকিৎসকদের খুব খেয়াল রেখে চিকিৎসা করতে হবে।

ফুসফুসে কোনও রকম সংক্রমণ হলে সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। পালমোনারি এমবলিজম হলে ব্লাড থিনার দিতে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন