স্বাস্থ্যসচেতন জাতি মুসলমান

  10-08-2021 12:35PM


পিএনএস ডেস্ক: পৃথিবী নামক মানব -গ্রহের ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও বাংলাদেশে ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই খালি হচ্ছে মায়ের বুক, এতিম হচ্ছে সন্তান। বিধবা হচ্ছে স্ত্রী, শোকে পাথর হচ্ছে স্বামী। আইসিইউর জন্য হাহাকার, অক্সিজেনের জন্য ছোটাছুটি; এসব এখন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সাধারণ দৃশ্য। যে দৃশ্য ভাবতেও আঁতকে উঠতাম, তা-ই এখন গায়ে সয়ে যাচ্ছে আমাদের। মনে পড়ে, দেড় বছর আগে দেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এবং প্রথম যখন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তখন যতটা ভয় পেয়েছিলাম আজ আড়াই শর বেশি মৃত্যুও আমাদের সেভাবে আতঙ্কিত করছে না। আতঙ্ক ভালো নয়। জাতি হিসেবে আমরা সাহসী সেটাই এখন প্রমাণ হয়ে গেল। কিন্তু দুঃসাহস বলেও তো একটি মারাত্মক শব্দ আছে। হ্যাঁ, আমরা সাহসের গণ্ডি পেরিয়ে দুঃসাহসী আচরণ করছি। স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কাই আমরা শুরু থেকে করিনি। জানি না আল্লাহ আমাদের মস্তিষ্কে কী বুঝ দিয়েছেন, কোনোভাবেই আমরা স্বাস্থ্যবিধিতে অভ্যস্ত হতে পারলাম না। যার ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

আমরাই তো গর্ব করে বলি, মুসলমানরা শ্রেষ্ঠ জাতি। সভ্য জাতি। শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান এক কথায় সবকিছুর আকর ইসলাম ধর্ম। তাহলে আজকের এ দুর্দিনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে দুনিয়াকে আমরা কী দিতে পেরেছি? যেখানে ভুটানের মতো ছোট্ট দেশ করোনা মোকাবিলায় সফল, সেখানে মসজিদের শহর ঢাকায় মৃত্যুর মিছিল কেন! আমরা অনেকেই বলি কপালে লেখা আছে তাই মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কপালের দোহাই দিয়ে মৃত্যুর মুখে নিজেকে এবং অন্যদের ঠেলে দেওয়া কি আত্মহত্যা নয়? যে আত্মহত্যা করে সেটাও তো তার তাকদিরেরই লেখা। তবু আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, আত্মহত্যাকারী অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। কেন? কারণ, আল্লাহ তাকে যে স্বাধীন বুদ্ধিমত্তা দিয়েছিলেন, দিয়েছিলেন অপার সম্ভাবনাময় বিবেক সে তা কাজে না লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। সবকিছুই তাকদির অনুযায়ী হয় কথাটা যেমন সত্যি তেমনি বান্দা শুধু পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে এও সত্যি।

আল্লাহ বলছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে। তাকে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি। আমি তাকে দুটো পথ দেখিয়েছি। এবার চাইলে সে কৃতজ্ঞ হবে, অথবা সে অকৃতজ্ঞ হবে। দেখেশুনে চিন্তা করে সে কেমন সিদ্ধান্ত নেয়- এটা পরীক্ষা করার জন্য তাকে আমি এত নিয়ামত দিয়েছি। সুরা দাহর, আয়াত ২-৩। বলছিলাম, ইচ্ছা করে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে চলাও এক ধরনের আত্মহনন। সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনেশুনে নিজেদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিও না।’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা লিখেছেন, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে মানুষ যদি নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তাহলে সে-ও আত্মহত্যাকারী হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও যার মৃত্যু হওয়ার তার হবেই, কিন্তু পৃথিবীবাসী তো অবাক চোখে দেখবে,মুসলমানরা কত সভ্য জাতি, কত স্বাস্থ্যসচেতন জাতি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন