আখিরাতের সফলতা চূড়ান্ত সফলতা

  13-08-2021 01:40PM


পিএনএস ডেস্ক: মানুষ দুনিয়ায় সফল হওয়ার জন্য কত কষ্ট সহ্য করে! কেউ কেউ সফল হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ হতাশ হয়। একটু সুখের আশায় মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ নিজেদের জীবন জাহান্নামে পরিণত করে। অথচ প্রকৃত সফলতা আখিরাতের সফলতা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর অবশ্যই যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। তবু কি তোমরা বুঝো না?’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১০৯)

আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন ঘোষক (জান্নাতের মধ্যে) ঘোষণা দেবে, এখন থেকে তোমরা জীবিত থাকবে আর কখনো মরবে না। তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা অফুরন্ত ভোগবিলাসের ভেতর থাকবে, অভাব-অনটন কখনো তোমাদের স্পর্শ করবে না। এটাই আল্লাহ তাআলার এ বাণীর তাৎপর্য আর এটাই জান্নাত—তোমাদের যে জান্নাতের অধিকারী করা হয়েছে। এটা দেওয়া হয়েছে তোমাদের কাজের ফলস্বরূপ।’ [(সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৭২) (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৪৬)]

দুনিয়ার সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে আখিরাতের অবস্থান চিরস্থায়ী এবং সেখানকার সুখ-দুঃখও চিরস্থায়ী। তাই আমাদের আসল চিন্তা আখিরাতের হওয়া উচিত। আর আখিরাতের সুখ-শান্তি তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল। যারা দুনিয়ার জীবনে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহর ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকে, কষ্ট হলেও হালাল পথে থাকার চেষ্টা করে, তাদের জন্যই আছে স্থায়ী সফলতা; যে সফলতা অতীতের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছে। বলা হবে, তোমরা (ফেরেশতারা) একে জাহান্নাম থেকে একবার ডুবিয়ে আনো। অতএব তাকে জাহান্নামে একবার ডুবিয়ে আনা হবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে অমুক! তুমি কি কখনো সুখের ছোঁয়া পেয়েছ? সে বলবে, না, আমি কখনো সুখের ছোঁয়া পাইনি। অতঃপর ঈমানদারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে জীবন কাটিয়েছে। বলা হবে, একে একটু জান্নাত দেখাও। অতঃপর তাকে জান্নাত দেখানো হবে। এরপর তাকে বলা হবে, হে অমুক! তোমাকে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছে? সে বলবে, আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২১)

সুবহানাল্লাহ! প্রকৃত সফলতা ও সুখ সেটাই, যেটা স্থায়ী হয় এবং অতীতের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।

আর মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিম্ন স্তরের জান্নাতি ব্যক্তি ১০ দুনিয়ার সমান জান্নাত পাবে। সেখানে তাদের ভোগবিলাসের উপকরণের কোনো অভাবই থাকবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে, সেখানে তাদের স্বর্ণনির্মিত কঙ্কণ এবং মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে। সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। তারা বলবে, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেখানে কোনো ক্লেশ আমাদের স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করে না।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৩৩-৩৫)

এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের সর্বদা আখিরাতের জীবন প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন। আনসার ও মুহাজিররা একদিন ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করছিলেন। তাঁদের কোনো গোলাম বা ক্রীতদাস ছিল না যে তাঁরা তাদের এ কাজে নিয়োগ করবেন। ঠিক এমন সময়ে নবী (সা.) তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হলেন। তাঁদের অনাহার ক্লিষ্টতা ও কষ্ট দেখে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! আখিরাতের সুখ-শান্তিই প্রকৃত সুখ-শান্তি। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। সাহাবিরা এর জবাবে বলেন, আমরা সেসব মানুষ, যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি যত দিন আমরা জীবিত থাকি—আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের জন্য।’ (বুখারি, হাদিস : ৪০৯৯)

অর্থাৎ আখিরাতের প্রকৃত সুখ-শান্তি পেতে তাঁরা সারা জীবন রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থেকে যেকোনো কষ্ট সহ্য করার শপথ গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আখিরাতের সফলতা দান করুন। আমিন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন