স্বপ্নের ব্যাপারে হাদিসের আট নির্দেশনা

  06-11-2021 02:41PM


পিএনএস ডেস্ক: ইসলাম স্বপ্নকে ঐশী জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করেছে। নবীদের স্বপ্ন সন্দেহাতীতভাবে অহি। আর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন যদি ইসলামপরিপন্থী না হয় তবে তাও ব্যক্তিগতভাবে আমলযোগ্য। হাদিসের বিশাল ভাণ্ডারে সত্য স্বপ্ন সম্পর্কে অপরিমেয় নির্দেশনা আছে। নিম্নে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১. সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে অহির সূচনা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রত্যাদেশ প্রেরণের প্রাথমিক পদ্ধতি ছিল সত্য স্বপ্ন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রথম যে মাধ্যমে অহি আসা শুরু হয় তা হলো ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্ন। তিনি যেকোনো স্বপ্নই দেখতেন তা ভোরের আলোর মতো সত্য হতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৮২)#

২. সত্য স্বপ্ন নবুয়তের অংশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) সত্য স্বপ্নকে নবুয়তের অংশ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শুধু মুবাশশিরাত (সুসংবাদ) ছাড়া নবুয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বলেন : ভালো স্বপ্ন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৯০)
৩. নবীজি (সা.) স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতেন : ফজরের নামাজান্তে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করতেন রাতে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছেন কি না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের নামাজের পর মুখ ফেরাতেন তখন বলতেন : তোমাদের মধ্যে কেউ রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি?’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ২)

৪. স্বপ্নযোগে আজানের বিধান লাভ : সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ আজানের বিধান দান করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে জায়িদ (রা.) স্বপ্ন দেখেছিলেন। হাদিসের বিশুদ্ধ ছয় কিতাবের বর্ণনায় সে ঘটনা বিবৃত হয়েছে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৯)

৫. সত্য স্বপ্ন সুসংবাদ : পবিত্র কোরআনের সুরা ইউসুফের ৬৪ নম্বর আয়াতের ‘বুশরা’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে? প্রশ্নটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হলো উত্তম স্বপ্ন, যা কোনো মুসলিম নিজে দেখতে পায় অথবা তার জন্য দেখানো হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৯৮)#

৬. রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্ন দেখা : মুমিনমাত্রই প্রত্যাশা থাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জীবনে ন্যূনতম একবার স্বপ্নে দেখা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : ‘যে ঘুমের মধ্যে আমাকে দেখে সে যেন বাস্তবেই আমাকে দেখেছে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৬৬)

৭. কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে স্বপ্ন : কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে মুমিনদের স্বপ্ন খুব কমই অসত্য হবে মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘কিয়ামত যত নিকটবর্তী হবে, মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হলো নবুয়তের ৪৬ ভাগের একভাগ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০১৭)

৮. মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে : ভালো স্বপ্ন যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তেমনই মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে স্বপ্নের ভালো-মন্দ নির্ধারণে জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা আদায় করা ও অন্যদের স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে অপছন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৮৫)


স্বপ্নের ব্যাখ্যা কার কাছে জানতে চাইব
ইমাম তিরমিজি (রহ.) বর্ণিত এক হাদিসে স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্নের কথা শুধু এমন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে ছাড়া কাউকেই বলা উচিত নয় যে তাকে অত্যন্ত ভালোবাসে এবং যে প্রজ্ঞাবানও। কাজি আবু বকর ইবন আল-আরাবি (রহ.) বলেছেন, আলেমের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোকে সাধ্যমতো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। (ফাতহুল বারি : ১২/৩৬৯)

ইমাম বাগাভি (রহ.) বলেছেন, জেনে রেখো যে স্বপ্নের তাবির বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা যায় কোরআন বা সুন্নাহর আলোকে অথবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত বাগবিধির আলোকে অথবা বিভিন্ন নাম ও রূপকের মাধ্যমে অথবা বিপরীত কোনো বিষয়ের আলোকে। (শরহুস সুন্নাহ : ১২/২২২)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন