বসে নামাজ পড়া কি জায়েজ?

  14-08-2022 12:57PM



পিএনএস ডেস্ক : ইসলাম সহজাত ও স্বভাবজাত ধর্ম। মানুষের সাধ্যাতীত কোনো বিধান ইসলামে দেওয়া হয়নি। নামাজ আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় বিধান। উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন আল্লাহ তায়ালা।

নামাজের বাহির এবং ভেতরে মোট ১৩টি ফরজ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ হলো দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।

দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তি বসে নামাজ আদায় করলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না বলে অভিমত দিয়েছেন ফুকাহায়ে কেরাম। তবে যে ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কিংবা বয়স বেশি হওয়ার কারণে দাঁড়াতে অক্ষম সেই ব্যক্তি বসে নামাজ আদায় করতে পারবেন। -(আল-মুগনী, ১/৪৪৩)

কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলেমগণ বেশ কিছু কারণে বসে নামাজ পড়াকে জায়েজ বলেন। পাঠকের জন্য বসে নামাজ পড়া জায়েজের কারণগুলো তুলে ধরা হলো-

>>> কোনো অসুস্থতা বা বিশেষ কোনো কারণে দাঁড়াতে অক্ষম হওয়া।

>>> রোগ বেড়ে যাওয়া।

>>> দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে বাস্তবিকভাবেই আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে।

>>> অসুস্থতার কারণে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে এতোটা কষ্ট হয় যে এতে নামাজের খুশু-খুজু নষ্ট হয়ে যায়। যদি এর থেকে কম কষ্ট হয় তাহলে বসে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।

হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, যদি না পারো তাহলে বসে নামাজ পড়ো, যদি তাও না পারো, তাহলে ইশারা করে নামাজ আদায় করো। (বুখারি, হাদিস : ১০৫০)

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সা.) খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এমন সময় একদিন বিলাল (রা.) নামাজ আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ ( সা.)- কে ডাকতে আসলেন। নবীজি ( সা.) বললেন, আবু বকরকে নামাজ পড়াতে বলো। ফলে আবু বকর (রা.) সে কয়দিনের নামাজ আদায় করালেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সা.) একদিন একটু সুস্থতা মনে করলেন। তিনি দুই সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে দুই পা মাটির সাথে হেঁচড়িয়ে নামাজের জন্যে মসজিদে আসলেন। মসজিদে প্রবেশ করলে আবু বকর (রা.) রাসূলের আগমন টের পেলেন ও পিঁছু হটতে আরম্ভ করলেন। রাসূলুল্লাহ ( সা.) তা দেখে সেখান থেকে সরে না আসার জন্য আবু বকর (রা.)-কে ইঙ্গিত করলেন। এরপর তিনি আসলেন এবং আবু বকর (রা.)-এর বাম পাশে বসে গেলেন। আর আবু বকর (রা.) দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। রাসূলুল্লাহ ( সা.) বসে বসে নামাজ আদায় করলেন। (বুখারী ৬৮৭-৭১৩, মুসলিম ৪১৮)

ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, ‘আমার অর্শ রোগ ছিল। সে প্রসঙ্গে আমি নবী (সা.)-কে নামাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন: তুমি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে, যদি দাঁড়াতে না পার তাহলে বসে পড়বে। যদি বসতে না পার তাহলে কাত হয়ে শুয়ে নামায পড়বে। -(সহিহ বুখারি, ১০৬৬)

ইমরান (রা.)-এর হাদিস প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থতা ও বিশেষ কোনো কারণে সে দাঁড়াতে পারে না, তার জন্য বসে নামাজ পড়া জায়েজ এবং যে ব্যক্তির এমন কোন ওজর ঘটেছে যার কারণে সে বসতে পারে না, তার জন্য কাত হয়ে শুয়ে নামাজ পড়া জায়েজ। - (নাইলুল আওতার ৩/২৪৩, মাজমুউল ফাতাওয়া, ৮/৪৩৭)

বসে নামাজ পড়ার নিয়ম:

যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম, সে বসে বসে রুকু-সিজদা আদায় করে নামাজ পড়বে। বসে নামাজ পড়ার সময় তাশাহহুদের মতো করে বসবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২/৫২৭)

বসে রুকু-সিজদা আদায়কারী নামাজে রুকুর তুলনায় সিজদায় সামান্য বেশি ঝুঁকবে। না হয় তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬)

বসে সিজদা করার জন্য কোনো জিনিস ওপরে তোলা এবং সেটাতে সিজদা করা- এসবের প্রয়োজন নেই। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৩৮১৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৭৩, -ইসলাম সুয়ালুন ওয়া জওয়াব )

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন