জুমার খুতবায় নবীজি (সা.)-এর নাম শুনে দরূদ পড়তে হবে?

  14-10-2022 12:22PM



পিএনএস ডেস্ক : জুমাবার মুসলমানদের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। অধিক মর্যাদাসম্পন্ন এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। ‘আল জুমা’ নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় হলো জুমার নামাজ। অযথা ও বিনা কারণে কখনো জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে শরিয়তে কঠিন সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তায়ালা তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।’ (তিরমিজি হাদিস : ৫০২)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো অপারগতা এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দফতরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।

প্রত্যেক বালেগ পুরুষের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। -(সুনানে নাসায়ি)

জুমার দিন বেশ কিছু সুন্নত ও ওয়াজিব আমল আছে। এর একটি হলো, জুমার খুতবা। খুতবা জুমার নামাজ আদায়ের জন্য শর্ত বা ফরজ। খুতবা ব্যতীত জুমার নামাজ হয় না। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলাও অনর্থক। (বুখারি, হাদিস নং: ১/১২৮, ৮৯২; মুসলিম, হাদিস: ২০০৫ )

ইমাম যখন আরবিতে জুমার খুতবা দেন এতে প্রায় সময় নবীজি (সা.)-এর নাম বলেন তিনি। নবীজি (সা.)-এর নাম শুনলে দরুদ শরীফ পড়ার কথা এসেছে হাদিসে। তাই জুমার খূতবার সময় নবীজি (সা.)-এর নাম এলে কি দরুদ শরিফ পড়তে হবে নাকি চুপ করে খুতবা শোনা ওয়াজিব হওয়ায় এ সময় চুপ থাকবে?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন, ‘খুতবা চলাকালে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাম এলে মুখে উচ্চারণ করে দরুদ শরিফ পড়া যাবে না। কেননা খুতবা অবস্থায় কথাবার্তা এবং সব প্রকার জিকির নিষিদ্ধ। তবে মনে মনে দরুদ শরীফ পড়ে নেয়ার অবকাশ রয়েছে। কেননা এতে চুপ থেকে খুতবা শোনার বিধান লঙ্ঘিত হয় না।-(আলমাবসূত, সারাখসী ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬০; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৬)

হাদিসের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না। -(মিশকাত, হাদিস: ৩/৪৩২)

তাই মুসল্লিদের উচিত খুতবার সময় কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে খুতবা শোনা এবং যেসব কাজ নামাজে নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকা।

ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে শামি’তে একটি মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে, যেসব কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। যেমন- কথাবার্তা বলা ও পানাহার করা ইত্যাদি। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৩৫)

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন