রাসূল (সা.) এর সংগ্রামী জীবন

  27-10-2022 09:51AM



পিএনএস ডেস্ক : রাসূল ﷺ এই ধরাধামে এসেছিলেন আল্লাহর দীনকে সমুন্নত করতে, পৃথিবীতে কালেমার ঝান্ডাকে উড্ডীন করতে। আল্লাহর একত্ববাদকে দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে।

এক্ষেত্রে তিনি বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। শত্রুর মুখোমুখী হয়েছেন। হয়েছেন যুদ্ধের মুখোমুখী। মাক্কী জীবনে যুদ্ধের সম্মুখীন না হলেও মাদানী জীবনে বেশ কিছু যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়েছে। কাফির-মুশরিকরা ইসলামকে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিলো, ধ্বংস করে দেয়ার পায়তারা করছিল।

তাই, প্রতিরোধ গড়তে এসব যুদ্ধের অবতারনা। তবে নবুয়্যাতের আগে রাসূল ﷺ এর বয়স যখন পনের বছর তখন একটি যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। যার নাম হারবুল ফুজার বা ফুজার যুদ্ধ।

কিশোর বয়সে স্বীয় চাচাদের সাথে তিনি সে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ওই যুদ্ধে অংশ নিলেও তিনি যুদ্ধ ও যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখে খুব ভারাক্রান্ত ও ব্যথাতুর ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে যুবকদের নিয়ে হিলফুল ফুযুল সংগঠন গঠন করেন।


হিজরতের পরে মাদানী জীবনে নবী ﷺ তিনি নিজে ছোট-বড় ২৩টি মতান্তরে ২৭টি বা ২৯টি যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। যেগুলোকে বলা হয় গাযওয়া। আর ছোট ছোট ৪৩ মতান্তরে ৬০টি বা ৬৩টি যুদ্ধে নিজের পক্ষ হতে সেনাপতি নির্ধারণ করে পাঠিয়েছেন। এগুলো হলো সারিয়া। পরিসংখানে এতগুলো যুদ্ধ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন ধরণের যুদ্ধ ছাড়াই সন্ধি বা চুক্তির মাধ্যমে সমাপÍ হয়েছে।

রাসূল ﷺ চাইতেন যাতে কোন ধরণের যুদ্ধ বা রক্তপাত ছাড়াই সমাধান হয়। কেননা, রাসূল ﷺ সবসময় ক্ষমা পরায়ণ ছিলেন। তিনি যে রহমতের নবী। তিনি নিজ হাতে কখনও কোন মুশরিক বা অমুসলীমকে হত্যা করেন নি।

যুদ্ধক্ষেত্রে রাসূল ﷺ এর বিশেষ নির্দেশনা ছিলো। যারা যুদ্ধে নেই, বৃদ্ধ, মহিলা, শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে না। যুদ্ধে শত্রু মৃত্যুর পর তার দেহকে বিকলাঙ্গ করা বা কোনরূপ কষ্ঠ প্রদান করা মুসলমানদের স্বভাবজাত ছিলোনা, যা কাফির মুশরিকদের আচরণ ছিলো। বিরোধী পক্ষের সম্পদ নষ্ঠ না করার নির্দেশনাও ছিলো। তদুপরি কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এসব যুদ্ধের অনেকটাই ছিলো প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষামূলক।

যুদ্ধের প্রারম্ভে শত্রু পক্ষকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দিতেন, ইসলাম গ্রহণ না করলে মুসলমানদেরকে জিযিয়া বা কর প্রদানের আহবান করতেন। তাতে সম্মত না হলে যুদ্ধের অবতারণা হতো। যুদ্ধক্ষেত্রে রাসূল ﷺ ছিলেন খুব কৌশলী। স্থান নির্ধারণ, সৈন্য সাজানোসহ সর্বক্ষেত্রে ছিলেন পারদর্শী। আমরা বদর, ওহুদ, খন্দক, তাবুক সহ বিভিন্ন যুদ্ধের দিকে থাকালে তার দৃষ্টান্ত খুঁেজ পাই। রাসূল ﷺ যুদ্ধে সমরাস্ত্র হিসেবে অশ্ব বা উট, বর্ম, তলোয়ার, তীর ব্যবহার করতেন।


কৌশলী ও সূনিপূণ হওয়ার কারণে দেখা যায় যে, রাসূল ﷺ অল্পসংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে, যৎসমান্য বাহন নিয়ে, সামান্য অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে বিশাল সংখ্যক শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরসহ ওহুদ, খন্দক ও তাবুক যুদ্ধ তার জ¦লন্ত প্রমাণ। সৈন্য সাজানোর ক্ষেত্রেও রাসূল ﷺ এর রণকৌশল আমরা দেখতে পাই।

ওহুদ যুদ্ধের ক্ষেত্রে তার প্রতীয়মান হয় আরো স্পষ্ট করে। এভাবে প্রতিটি যুদ্ধে রাসূল ﷺ খুব নিপূণ ও পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। শত্রুকে কিভাবে পরাস্ত করতে হয় তার অন্যতম দৃষ্টান্ত ছিলো খন্দকের যুদ্ধ। পরিখা খনন করে শত্রুদের তিনি মোকাবেলা করেছেন দিনের পর দিন। সবশেষে শত্রুরা উৎসাহ হারিয়ে হতাশাকে সাথী করে চলে যায় আপন নীড়ে। মহান রবের মনোনীত ধর্ম ইসলামকে দমানোর ব্যর্থ আশা অন্তরেই রয়ে যায়।

তাছাড়া তিনি যুদ্ধ ছাড়াই সন্ধির মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত প্রসারের ক্ষেত্রে ছিলেন সূদূর প্রসারী চিন্তার অধিকারী। এর প্রমাণ পাওয়া যায় হুদায়বিয়ার সন্ধির ক্ষেত্রে। বাহ্যিকভাবে হুদায়বিয়ার সন্ধি মুসলমানদের বিপরীত দেখা গেলেও তা ছিলো মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের অন্যতম সোপান। যার কারণে মহান রব ওই সন্ধিকে ‘ফাতহুম মুবীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাসূল ﷺ এর প্রজ্ঞা ছিলো সৃষ্টির সেরা সমরবিদ এর। তিনি চাইতেন কম রক্তপাতে বা রক্তপাতহীন বিজয় অর্জনের। এক্ষেত্রে মক্কা বিজয় ছিলো রাসূল ﷺ এর অন্যতম বিজয়। রক্তপাতহীন এ বিজয় কিয়ামত অবধি স্বর্ণাক্ষরে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।

রাসূলের জন্মভূমি যে মক্কা নগরী থেকে কাফির মুশরিকরা বিতাড়িত করেছিল তাতে তিনি প্রবেশ করেছিলেন বিজয়ীর বেশে। কোন ধরনের প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে তিনি সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তিনিই তো রহমতের নবী ﷺ। শুধু মক্কা বিজয় নয় প্রত্যেকটি যুদ্ধে রাসূল ﷺ ছিলেন ক্ষমাপরায়ণ। তার প্রমাণ ইসলামের প্রথম যুদ্ধ থেকেই পাওয়া যায়। বদর যুদ্ধে ইসলাম ধর্মকে নিঃশেষ করতে যে কাফির-মুশরিকরা এসেছিল তাদের যুদ্ধ বন্দীদের তিনি হত্যা না করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দান করেছিলেন।

সবশেষে বলতে চাই, রাসূল ﷺ এর হাত ধরে ইসলামের প্রতিটি যুদ্ধ ছিলো বিজয়ের, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত করার। তিনি তো এসেছিলেন আল্লাহর একত্ববাদকে জমিনে প্রচার করতে, ইসলাম ধর্মকে সমুন্নত রাখতে।

আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম মনে করেনা এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে’ -(সুরা আত তাওবাহ, আয়াত ঃ ২৯)।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন