কাবিননামায় ‘কুমারী’ শব্দ বাতিল ঘোষণা হাইকোর্টের

  19-11-2022 10:02PM

পিএনএস ডেস্ক : মুসলমানদের বিয়ের কাবিননামা হিসেবে পরিচিত রেজিস্ট্রেশন ফরমের (নিকাহনামা) ৫ নম্বর কলামে থাকা ‘কুমারী’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থী এবং তা বাতিল ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) ৩২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে কাবিননামা থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে পৃথক পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উভয় বিচারপতি।

রায়ে বলা হয়, কাবিননামায় ‘কুমারী’ শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থী। এ কারণে ছয় মাসের মধ্যে কাবিননামার ফরম থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, নিকাহনামার ২১ ও ২২ নম্বর দফায় বরের বর্তমানে কোনো বিবাহ বলবৎ আছে কিনা, কেবল সে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বর তালাকপ্রাপ্ত বা বিপত্নীক অথবা কুমার কিনা, এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, বিতর্কিত ৫ নম্বর দফায় কন্যা তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা কিনা, পাশাপাশি কন্যা আগে কোথাও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন কিনা- এ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে যা অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের পরিপন্থী। এ ধরনের তথ্য চাওয়ার বিধান সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষায় এ ধরনের হস্তক্ষেপ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত নারীর ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার অধিকার ক্ষুণ্ন করে। অবিবাহিত শব্দের পরিবর্তে কুমারী শব্দের প্রয়োগ নারীর জন্য অমর্যাদাকর ও অপমানজনক, যা সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদ এবং সিডও সনদের লঙ্ঘন।

এর আগে, এ বিধিটি বাতিল চেয়ে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, একবিংশ শতাব্দীতে একটা মেয়ে কুমারী থাকলো কি থাকলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা খুবই অসম্মানজনক।

ঐ রুলের ওপর শনিবার শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।

তিনি বলেন, ফরমের ৫ নম্বর কলামে ‘কুমারী’ শব্দটি থাকা উচিত নয়। এ শব্দটি ব্যক্তির মর্যাদা ও গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ন করে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এগুলো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম শরীয়তে বিয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন