পিএনএস ডেস্ক: জেলেদের বিতরণের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ১৬ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আজ আদালতে মামলা হয়েছে।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম জসীম উদ্দিন হায়দার। তিনি বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
রোববার (২৩ জুন) বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদ এর আদালতে চেয়ারম্যান জসীম হায়দার এবং তার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম সিকদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপির ব্যক্তিগত সহকারী মীর মো. নজরুল ইসলাম।
মামলা প্রসঙ্গে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসাইন খান বলেন, জেলেদের ১৬ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে খানখানাবাদের চেয়ারম্যান ও এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইজিপিপি ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে খানখানাবাদ ইউনিয়নের নিবন্ধিত এক হাজার জেলে ও মৎসজীবীর জন্য প্রতিজন ৫৬ কেজি করে ৫৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে যোগসাজশে ১৬ টন চাল মামলার আসামীরা আত্মসাৎ করেছে। এই অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৬/৫০৬/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১১ জুন রাতে বাঁশখালীর চাঁনপুরের আঞ্চলিক খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্য গুদাম থেকে নির্ধারিত ৫৬ টন চাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কিছু চাল জেলেদের বিতরণ না করে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে বিক্রির খবর পৌঁছে বাঁশখালীর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপির কাছে। পরদিন (১২ জুন) সকালে এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি খানখানাবাদ ইউপি কার্যালয়ে চাল বিতরণ স্থলে সরেজমিন পরিদর্শনে যান। এসময় নিবন্ধিত জেলেরাও চাল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ছিল। তখন চাল বিতরণ স্থানে হঠাৎ এমপির উপস্থিতি দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান।
এমপি চালের বস্তায় কি পরিমাণ চাল আছে জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার ৫৬ টন রয়েছে বলে জানান। তখন এমপি গোপন সূত্রের খবরে ১৬ টন চাল বিক্রি করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি মানতে নারাজ। তখনি এমপি চ্যালেঞ্জ করে তাৎক্ষণিক এক হাজার টাকা পারিশ্রমিকে দশজন শ্রমিক দিয়ে চালগুলো পরিমাপ করান। তখন ইউপি চেয়ারম্যানের সামনে পরিমাপ করে ৪০ টন চাল পাওয়ার সত্যতা মিলে।
এসময় ইউপি সচিব মো. জালাল মিয়াও ৫৬ টন চালের চালান কপি না পাওয়ার বিষয়টি জানান। তখন উপস্থিত জেলে ও স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের চাল আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়লে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে এমপি মুজিবুর রহমান চাল আত্মসাতকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হন। পরে আসামীরা মামলা করার আশ্বাস দেওয়ায় উল্টো এমপি মুজিবুর রহমানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন অভিযুক্তরা। এতে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী মামলা দায়ের করেছেন।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক চাল আত্মসাতের বিষয়টি স্থানীয় সাংসদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ার বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে নবনির্বাচিত এমপির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন।
এমএইউ
জেলেদের ১৬ টন চাল চেয়ারম্যানের পকেটে, মামলা
23-06-2024 10:46PM