বন্যা দীর্ঘমেয়াদি রূপ নেওয়ার আশঙ্কা

  14-07-2019 06:30PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : টানা অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশের বড় বড় নদ-নদীগুলোর পানি হু হু করে বাড়ছে। প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বানবাসি সাধারণ মানুষের।বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যার সঙ্গে ঝড় যোগ হওয়ায় নদ-নদীগুলো উত্তাল। এতে নদীর পাড় ভাঙ্গা অব্যাহত রয়েছে। নদীর পাড়ের পাশাপাশি ভাঙ্গছে বাঁধও। এতে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কষ্ট বাড়ছে। প্রথমে দেশের ১০টি জেলায় বন্যা দেখা দিলেও ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। এমনকি রাজধানী ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে বৃহত্তর ঢাকার মানিকগঞ্জ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

গতকাল অবিরাম বৃষ্টি ও ঝড় বয়ে যায়। এ সময় ব্যাপক বজ্রপাত ঘটে। বজ্রপাতে সারা দেশে ১৬ জনের প্রাণহানির খবর এসেছে মিডিয়ায়। মৃতদের মধ্যে কৃষক ও জেলের সংখ্যাই বেশি। শিক্ষার্থীও এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় কৃষক ও জেলারা মারা যান।গত কয়েক বছর বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যায় করস্থান, শশ্মান ডুবে যাওয়ায় মৃতদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। পাকের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় রান্না নিয়ে বিপাকে পড়ছেন বানভাসি মানুষ। অতিরিক্ত পানির কারণে ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় প্রাকৃতিক কাজ সারতে বিপাকে পড়ছেন সর্বস্তরের মানুষ। চাপকলগুলো ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকট চরমে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ নিরুপায় হয়ে বানের পানি খাচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কোথাও আশ্রয় কেন্দ্রে, কোথাও বা মাছা তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন। রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় তারা চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এই মুহূর্তে শুকনো খাবার তাদের বেশি প্রয়োজন। তাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেশলাই সরবরাহ জরুরি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বানবাসিদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যায় জমির ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচামরিচ, বেগুন, সসা, করলা, বরবটি, চিচিঙ্গা, দুন্দল, কাঁকরোলসহ মৌসুসী তরুতরকারির ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় বাজারে এগুলোর সরবরাহ কমে গেছে। ফলে তরকারির দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। বন্যার অজুহাত দেখিয়ে বাজারে বেড়ে গেছে ডিম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপণ্যের দাম।

বন্যায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে ফসলহানি, অন্যদিকে গবাদিপশু রাখা এবং এগুলোর খাবার জোগান দিতে গিয়ে তারা পেরেশান।নিজের পরিবার-পরিজনের যেখানে থাকা-খাওয়াই প্রায় অনিশ্চিত, সেখানে গবাদিপুশু রাখার জায়গা এবং খাবার জোগান দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বন্যা এলে কৃষক সমাজের নানা সমস্যা এভাবে বাড়ে। বন্যার সময় মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের কথা ভাবা হলেও, পশুদের জন্য ভাবা হয় না।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাকিয়ে আছে ত্রাণের দিকে। সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ অবস্থায় রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা জরুরি। বানভাসি মানুষ অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে আছে সহযোগিতার প্রত্যাশায়। সে প্রত্যাশা পূরণে সমাজের বিত্তশালীদের পাশাপাশি উদ্যামী তরুণ সমাজকে ত্রাণ সংগ্রহপূর্বক দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন