মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি, দাবি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

  11-07-2020 11:43PM

পিএনএস ডেস্ক : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, মার্চ মাসে করোনা আক্রান্ত রোগী যখন কোনো হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিল না তখন রিজেন্ট হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে। এই চুক্তির আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ তাকে চিনতেন না, পরিচয় থাকাতো দূরের কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মো জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের প্রতারণার খবর বেরিয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোগী ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার আগে ক্লিনিক দুটি পরিদর্শন করে চিকিৎসার পরিবেশ উপযুক্ত দেখতে পেলেও তার লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। তবে গত ২১ মার্চ লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্টের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়।

সমঝোতার চুক্তির পর সাহেদ করিম বেশ কয়েকবার অধিদপ্তরে এসেছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাহেদ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যোগাযোগ আছে, তার হাসপাতালে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কোভিড আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব বলার চেষ্টা করতেন। তবে গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট নিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। এর ভিত্তিতে গত ছয় জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে র‌্যাব অভিযান চালায়।

রিজেন্টের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিদপ্তরের অবস্থান পরিষ্কার। একটি ভালো কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতারিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ৭ জুলাই হাসপাতালটির কাযর্কম বন্ধ করা হয়েছে।

একই বিজ্ঞপ্তিতে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার ( জেকেজি) নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়েও নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের স্বত্ত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮ এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। কভিড সংকট শুরুর পর আরিফুল চৌধুরী অধিদপ্তরে এসে জানান, জেকেজি দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। ওভাল গ্রুপের সঙ্গে আগে থেকেই কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া যায় বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতারণার অভিযাগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

ইদানিং কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনাম নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি অসততা বা অন্যায়ের আশ্রয় নেন, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী যথাযথ শাস্তি হোক তা সকলেই প্রত্যাশা করে। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগত সাধারণ সীমাবন্ধতাগুলোকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সহানুভূতির বদলে তীর্যক মন্তব্য ও খণ্ডিত এবং বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অশালীনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এসবের পেছনে হীন বাক্তিস্বার্থ কাজ করছে বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা এখন মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না, ফলে আরও বেশী করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ অপরাধ করলে তদন্তেই তা ধরা পড়বে এবং শাস্তিও হবে। সুতরাং মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্র হনন এবং তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা কাম্য নয়। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সবার সহযোগিতা ও সুদৃষ্টি কামনা করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন