ইভানার মৃত্যু: নেপথ্যে পরকীয়া, স্বামীর সঙ্গে কলহের তথ্য

  20-09-2021 09:39PM

পিএনএস : রাজধানীর শাহবাগের পরীবাগে বহুতল বিশিষ্ট দুই ভবনের মাঝ থেকে ইভানা লায়লা চৌধুরী (৩২) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। বুধবার বিকেলে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

এদিকে অপমৃত্যুর মামলার নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিয়ের দশ বছর পার হলেও ইভানা তার পরিবারকে তার বৈবাহিক জীবনের কোনো কথা জানাননি। তবে তার মৃত্যুর পরে ইভানার এক শিক্ষকের কাছে ইভানার পাঠানো বেশ কিছু বার্তা নিয়ে ঘটনার মোড় ঘুরে যাচ্ছে। এদিকে ইভানার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আচরণও ‘সন্দেহজনক’ বলে জানিয়েছিলো ইভানার পরিবার। এমনকি ইভানার জানাজাতেও দেখা যায়নি ইভানার স্বামী রুম্মানকে।

ইভানার বন্ধুরা বলছেন, স্বামীর হাতে ‘নির্যাতন’র কথা ইভানা বলতেন তাদের, তবে বাবা-মার কথা ভেবে বিচ্ছেদের পথে এগোতে চাইতেন না।

জানা গেছে, ইভানা লায়লা চৌধুরী মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুলে ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ইভানার মৃত্যুর পর তার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী জানান, গত বুধবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। খবর পেয়ে দুপুরে তিনি ওই বাসায় যান। তবে বাসায় যাবার পর ইভানাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে দুই ভবনের মাঝে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ইভানাকে উদ্ধারকারী শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস আলী গণমাধ্যমকে বলেন, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ খবর পেয়ে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে দুটি ভবনের মাঝে ওই নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এরপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ইভানাকে মৃত ঘোষণা করে।

তিনি আরো বলেন, আমি অবাক হলাম, ওই নারীর পরিবারের কেউ মরদেহের সঙ্গে এলো না। মনে হলো তাদের কোনো অনুভূতিও নেই। আমরাই তার মরদেহ নিয়ে এলাম। বিষয়টি একটু অন্যরকম ঘটনা মনে হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এই বিষয়ে কেউ কোনো ধারণা দিতে পারছে না। এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত হবে নিরপেক্ষভাবে। পেছনে কোনো ঘটনা থাকলে সেটিও তদন্তে বের হয়ে আসবে।

তবে শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি এ ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুরো বিষয় তদন্ত করে ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হতো। ইভানাকে মারধরও করতেন তার স্বামী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী গণমাধ্যমকে বলেন, ইভানাকে চিনতাম। আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বছরখানেক হলো ইভানাকে মানসিকভাবে দুর্বল মনে হতো। কথাবার্তা কম বলত। একদিন তার কাছে ঘটনা জানার চেষ্টা করেছি। তখন সে জানায়, তার স্বামী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান ওরফে রুম্মান অন্য এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়ে সংসারে ঝামেলা যাচ্ছে। রুম্মান এই কারণে ইভানাকে সহ্য করতে পারত না। মাঝেমধ্যে ইভানার গায়ে হাত তুলত। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করতো।

ইভানা তার স্বামী-সন্তানদের নিয়ে পরীবাগের ২/ক/১৪ ভবনের ফ্লাট-৫ এ থাকতেন। ওই ভবনের এক বাসিন্দা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ইভানা চিৎকার করত। চিৎকার করে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি। কান্নাকাটিও করতে শুনেছি। এ জীবন তিনি আর রাখবেন না বলেও শুনেছেন। ইভানা বলত, আমাকে ঘরে রেখে আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেম কর, এর পরিণাম ভালো হবে না। রুম্মানও তখন বলতেন, তুই এই বাড়ি থেকে চলে যা। খুব ভালো থাকতে পারব। এমনকি ঘটনার দিন সকালেও তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে।

ওই নারী মৃত্যুর পর একটি অপমৃত্যুর মামলা হয় শাহবাগ থানা। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ইভানার মৃত্যুর বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। সেটিকে ধরে আমরা তদন্ত করছি। অনেকেই এই মৃত্যুর পেছনে রহস্য আছে বলে দাবি তুলেছেন। আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

পিএনএস /জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন