লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ, হটস্পট ঢাকা

  10-01-2022 09:16AM


পিএনএস ডেস্ক: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার লাফিয়ে বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। আক্রান্তের অধিকাংশই ঢাকা জেলায় শনাক্ত হওয়ায়, হটস্পট হয়ে উঠেছে ঢাকা। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া ২১ জনও ঢাকার বাসিন্দা। এই গুচ্ছ সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, এরই মধ্যে শনাক্তের হার পৌনে ৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এটা প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী। যখন থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তখন থেকেই সতর্কবাণী প্রচার করছি। স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছেন না। যার ফলে শনাক্তের হার বাড়ছে।’ এ সময় প্রজ্ঞাপন জারির কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণকে সচেতন হতে হবে। শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুই-এক দিনের মধ্যে বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘দেশে গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। গত শনিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে দেশে ৬ হাজার ৩০০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩ হাজার ৩৭৬ জন বেশি। অর্থাৎ এক সপ্তাহে সংক্রমণ প্রায় ১১৫ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে করোনায় ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। দেশে গত কয়েক দিনে শনাক্তের সংখ্যা, হার উভয়ই বাড়ছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেও শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে ছিল। গতকাল এটি ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩০ দিনে আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী চিত্র চোখে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকে একেবারেই সুস্থ আছেন। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। দেশের ১১৮টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকায় সামগ্রিকভাবে কভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৪ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে খালি আছে ৪ হাজার ১৭৯টি।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯১ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৫৪, শুধু ঢাকা জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৯৬ জন। রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত শনিবার আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১১৬ জন। রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। শনাক্ত ১ হাজার ১১৬ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৯২১ জন। অর্থাৎ, শনাক্তদের মধ্যে শতকরা ৮২ দশমিক ৫২ শতাংশই ঢাকা জেলার। আর ঢাকা বিভাগে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯৪৩ জন। গত ৭ জানুয়ারি শনাক্ত হওয়া ১ হাজার ১৪৬ জনের মধ্যে ঢাকা জেলারই ৯০২ জন। ৬ জানুয়ারি ১ হাজার ১৪০ জনের মধ্যে ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৯৫০ জন। এখন পর্যন্ত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছেন ২১ জন। তারা সবাই ঢাকা জেলার বলে জানিয়েছে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি)। কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত ২১ জনই ঢাকার। ঢাকায় এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে শনাক্তদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশই ঢাকায়। এবার আবার ঢাকা হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এখন ঢাকায় ওমিক্রনের দুই-একটি ক্লাস্টার সংক্রমণ চলছে, সেটি সারা দেশে ছড়াবে। কারণ মানুষ মাস্ক পরছে না। এখনই সতর্ক হতে হবে, না হলে সংক্রমণ দ্বিগুণ হারে বাড়বে।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন