বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় ৪ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

  21-05-2022 01:15AM

পিএনএস ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধ করোনা-বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পথে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে বৈশ্বিক এ সংকট উত্তরণে কৃষিখাতে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সুবিধা বাড়ানোসহ সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২০ মে) গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) এর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে তিনি এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা কার্যকরভাবে সংকট মোকাবিলায় উন্নত অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সু-সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ধার পেতে লড়াই করছে। এ যুদ্ধ এরইমধ্যে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর চাপ যুক্ত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে, যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এরইমধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ এবং এসআইডিগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অবিলম্বে এবং লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন।

এ বিষয়ে তিনি উন্নত দেশসমূহ ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে এ গ্রুপটি গঠন করেছেন। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চারটি প্রস্তাব রেখেছেন।

প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠন করায় আমি খুশি। আমরা সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন দেবো।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির বৈশ্বিক বাণিজ্য ও রপ্তানি আয় পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থনও থাকতে হবে।

তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতি এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং শুল্ক-মুক্ত-কোটা-মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়ন দিতে হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।

তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। এই বিষয়ে বেসরকারি খাতের সাথে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।

পরিশেষে, তিনি ৪৮-সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন, আমরা অনেক এসআইডি এবং নিম্নাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এসব দেশে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।

বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী।

তিনি বলেন, আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত।

জাতি হিসেবে আমরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার জন্য পরিচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি তার সর্বশেষ উদাহরণ।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, মহামারি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টায় জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়েছি। যারা সবচেয়ে পেছনে রয়েছে তাদের সহায়তা দিতে আমরা সামাজিক সুরক্ষার কভারেজ প্রসারিত করেছি।

তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সময়মত ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের একটি বড় স্বাস্থ্য সংকট এড়াতে এবং জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি খাত এবং এসএমইকে সমর্থন করার জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছি। ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। আর এই পদক্ষেপগুলি আমাদের গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি বলেন, আমি এই সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠস্বর টেবিলে নিয়ে এসেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতীয় উন্নয়ন যাত্রা অনেক উদ্ভাবনী জলবায়ু কর্মের নেতৃত্ব দিয়েছে।
আমরা অন্যদের সুবিধার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবনতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন