আজ বিশ্ব হাতি দিবস

  12-08-2022 09:50AM




পিএনএস ডেস্ক : হাতি- দুই বর্ণের ছোট্ট একটি নাম। স্থলভাগের প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। বাঘ, সিংহের পর যে প্রাণীটির কথা সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সে হলো হাতি। দুঃখের বিষয়, আজ বিশ্বজুড়ে এই তিনটি প্রাণীকে সংরক্ষণের উপর বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে বিশ্ব বাঘ ও সিংহ দিবস পালন করা হয়েছে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে বিরল ও সবচেয়ে দীর্ঘকায় বিশালদেহী এই বন্যপ্রাণীটিকে রক্ষা করার দায় আমাদের সবার উপর এসে পড়েছে।

আজ থেকে ১০ বছর আগে মাত্র কয়েকজন বুঝেছিলেন সেই গুরুত্বের কথা। এক্ষেত্রে যাদের নাম সর্বাগ্রে সামনে চলে আসে তারা হলেন কানাডার দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস, মাইকেল ক্লার্ক এবং থাইল্যান্ডের রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশন। এদের জন্য আজ বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা সম্ভব হয়েছে।

২০১১ সালে বিশ্বে হাতি নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশেষ করে আফ্রিকার হাতি যেভাবে প্রতিনিয়ত শিকারি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংঘর্ষের কারণে বিপন্ন হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

তখন সবাই ভাবে এমন একটা কিছু করা জরুরী যাতে এই হাতির ব্যাপারে পুরো বিশ্বকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। যাতে করে সবাই হাতি সম্পর্কে সচেতন হয়। এগিয়ে এলেন দুই কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস, মাইকেল ক্লার্ক ও থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিটারট্রাকশন ফাউন্ডেশন।

তারা সবাই মিলে ঠিক করে যে প্রতি বছর ১২ আগস্ট দিনটিকে বিশ্ব হাতি দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

এরপর ২০১২ সালে প্রথম বিশ্ব হাতি দিবস উদযাপিত হয়। যেখানে একটি ডকুমেনটারি তৈরি হয়েছিল, আর সেখানে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা এবং স্ট্রার ট্রেক কিংবদন্তী উইলিয়াম শ্যাটনার দ্বারা রূপায়িত হয়েছিল। সেখানে তিনি ফিরে আসা অরণ্যের কথা বর্ণনা করেছিলেন। বন্যদের কাছে বন্দি এশিয়ান হাতিগুলোর পুনঃপ্রবর্তন সম্পর্কে ৩০ মিনিটের একটি আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র উপস্থাপিত হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই ডকুমেনটারির কি প্রয়োজন? এর পিছনে কি উদ্দেশ্য আছে? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য ও উত্তর। যা এখানে তুলে ধরছি। প্রথম বিশ্ব হাতি দিবসের প্রেরণা ছিল যে এই মহিমান্বিত প্রাণীর দুর্দশার প্রতি বিশ্বজুড়ে জনবসতি ও সংস্কৃতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

তাদের মনোরম ও বুদ্ধিমান প্রকৃতির কারণে, বিশ্বের বৃহত্তম ভূমির প্রাণীকে যেন বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দেওয়া হয়। তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে, এই দুর্দান্ত প্রাণীগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য আজ একাধিক হুমকির সম্মুখীন হয়ে চলেছে। সেটা সারা বিশ্বেই আজ প্রকট হয়েছে।

এর পিছনে কিছু কারণ আছে। কারণ ছাড়া কেউ কোনো কিছু করে না। আর তাই সেক্ষেত্রে হাতির চেয়ে মূল্যবান প্রাণী আর কি থাকতে পারে। তাই তো আজ হাতির উপরেই নেমে এসেছে কুঠারের ঘা। এর বড় ইস্যু হলো- হাতির দাঁতের বাণিজ্য।

হাতির দাঁতের দাম প্রায়শই সোনার দাম ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনে হন্তদন্তের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এটি হাতির দাঁতকে আগের চেয়ে বড় টার্গেট করে তুলেছে। এখানকার অর্থনীতি দৃঢ়তার সঙ্গে নম্র হাতির বিরুদ্ধে কাজ করে।

আফ্রিকার চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা লোকেরা প্রায়শই একটি হাতির দাঁত থেকে এক মাসের বেশি মজুরি উপার্জন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তা বিক্রি করে তারা লাভবান হয়।

এ ছাড়াও, বিশ্বের যে অংশগুলো হাতির দাঁত দাবি করে, যেমন চীন, তারা ক্রমশ ধনী হয়ে উঠছে, যার অর্থ তারা দাঁতালের জন্য বেশি অর্থ দিতে পারে। এই দ্বৈত কারণগুলোর জন্য হাতি শিকার বেড়ে গেছে। এরপর আরো একটি কারণ উঠে আসে, তা হলো- বাসস্থান হ্রাস পাওয়া। বাসস্থান হ্রাস পাওয়া বিশ্বের হাতির জনসংখ্যার জন্যও একটি বড় বিপদ, কারণ এর ফলে প্রতিদিনের শত শত পাউন্ড খাবারের জন্য হাতিকে বঞ্চিত করে।

তাদের পক্ষে বংশবৃদ্ধি করা আরো কঠিন হয়ে ওঠে এবং শিকারীদের পক্ষে তাদের সনাক্তকরণ সহজ করে দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে বন্য অঞ্চলে হাতির ক্ষতি রুখতে বাসস্থান হওয়াই সবচেয়ে জরুরী। এক শতাব্দী আগে, ১২ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক হাতি ছিল অরণ্যে। আজ, এই সংখ্যাটি চার লাখ হিসাবে কম হতে পারে, প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার হিসাবে শিকারীদের দ্বারা নিহত হয়ে চলেছে। বলছে একটি তথ্য।

তথ্য অনুসারে, হাতিগুলোর ভৌগলিক পরিসীমা ২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে এবং তাদের ঘুরে বেড়াতে একই রকম ক্ষতি হয়েছিল। আফ্রিকাজুড়ে বড় বড় উদ্যানের প্রবর্তনের ফলে আবাসস্থল ধ্বংস স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে, তবে অবৈধ শিকার হওয়া একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্কাস এবং পর্যটন পশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক এক সমস্যা।

তাই সিমস ও ক্লার্কদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব হাতি দিবসের তাৎপর্য অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, একই সঙ্গে মানব এবং হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব হ্রাস করার উপায়গুলো খুঁজতে সবাইকে একত্র হওয়ার জন্য একটি সুযোগ করে দিয়েছে। সমাধানের পথ সম্ভবত কৌশলগুলোর সংমিশ্রণের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে জমি বিকাশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা আবাসস্থল ধ্বংসকে হ্রাস করে, হাতিগুলোকে খামার থেকে দূরে রাখতে বৈদ্যুতিক বেড়া এবং স্থানীয় মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন