আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবনমন

  31-05-2023 09:38AM


পিএনএস ডেস্ক: আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের লং টার্ম ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিং ‘বিএ৩’ থেকে অবনমন করে ‘বি১’ নির্ধারণ করেছে মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস।

একই সঙ্গে শর্ট টার্ম ইস্যুয়ার রেটিং (স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাধ্যবাধকতা পূরণের সামর্থ্য) নির্ধারণ করেছে ‘নট প্রাইম’। এর মাধ্যমে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রেটিং অবনমন পর্যালোচনার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ নিয়ে মঙ্গলবার এ রেটিং প্রকাশ করেছে মুডি’স।

মুডি’সের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, চলমান সংকটের সময়টিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক দুর্বলতা ও তারল্য ঝুঁকি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে এসেছে। বাংলাদেশের সভরেন ক্রেডিট প্রোফাইল ‘বি১’ রেটিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিছুটা শিথিল হওয়া সত্ত্বেও চলমান ডলার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়টি থেকে বাংলাদেশের বহিঃস্থ অবস্থানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটছে। দেখা দিচ্ছে জ্বালানি সংকট। সরকার এখনও আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগটি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি এবং একাধিক বিনিময় হার ও সুদহারের সীমার মতো অপ্রচলিত উদ্যোগ বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি অর্থনীতির আকারের তুলনায় রাজস্ব আহরণ অত্যন্ত কম। বিষয়টিতে সরকারের নীতিগত সক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে স্বল্পমেয়াদের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে দুর্বল হচ্ছে সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা।

মুডি’স মনে করছে, বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতাকে দুর্বল করবে ঋণের পরিমাণ। এছাড়া আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন হতেও কয়েক বছর সময় লাগবে। একই সঙ্গে মুডি’স বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রাকে ‘বিএ১’ থেকে ‘বিএ২’ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সীমাকে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’-এ নামিয়ে এনেছে। সভরেন রেটিংয়ের চেয়ে স্থানীয় মুদ্রার সীমা দুই ধাপ ওপরে রয়েছে। স্থানীয় মুদ্রার সীমার চেয়ে দুই ধাপ নিচে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার সীমা।

মুডি’সের মূল্যায়ন অনুসারে, বাংলাদেশের বাহ্যিক অবস্থান মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় কাঠামোগতভাবে দুর্বল থাকবে। তবে বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাবে বলে প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি।

২০২৪ সালের জুনের শেষ নাগাদ রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করছে মুডি’স। তবে সেক্ষেত্রেও রিজার্ভ করোনাপূর্ব পর্যায়ে যেতে দু-তিন বছর লেগে যেতে পারে। বাংলাদেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তখন থেকে এ পর্যন্ত রিজার্ভ কমেছে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ৪০ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দিয়ে ৩ দশমিক ৭ মাসের পণ্য ও সেবা আমদানি করা যাবে। ২০২১ সালের আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে সাত মাসের আমদানি চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল। আমদানিতে বিধিনিষেধ ও জ্বালানিতে কৃচ্ছ্রসাধন সত্ত্বেও এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন ও আমদানিতে বিধিনিষেধের পাশাপাশি স্থিতিশীল রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে জ্বালানি পণ্যের দামের কারণে চলতি হিসাবের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।

মুডি’সের পূর্বাভাস, বাংলাদেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ আগামী দু-তিন বছর ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তমাফিক এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) বাদ দিয়ে হিসাব করা হলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমবে।

মুডি’স মনে করছে বাংলাদেশের আমদানির সক্ষমতার অনুপাত তিন মাসের আশপাশে স্থির থাকবে। সংস্থাটির এক্সটার্নাল ভালনারেবিলিটি ইন্ডিকেটর (ইভিআই) অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে ২ দশমিক ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

ধারাবাহিক নিম্ন রাজস্ব ও ক্রমবর্ধমান সুদ পরিশোধের কারণে আর্থিক অবস্থা বিশেষ করে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা দুর্বল হবে। জ্বালানি, সার ও খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় ঋণের পরিমাণ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের বাজেট ঘাটতি বাড়াবে।

অন্যদিকে আমদানিতে বিধিনিষেধের কারণে রাজস্ব আয় কমে গেছে। আর্থিক ঘাটতি আগামী পাঁচ বছরে জিডিপির ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশে থাকবে বলে মনে করছে মুডি’স। ২০২৬ অর্থবছর শেষে ঋণের পরিমাণ বেড়ে জিডিপির ৪০ শতাংশে দাঁড়াবে, যা ২০২২ অর্থবছর শেষে জিডিপির ৩০ শতাংশের নিচে ছিল।

তবে বাংলাদেশের ঋণের বোঝা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সহনীয় থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধের সুযোগ থাকায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধযোগ্য অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছে মুডি’স। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, সরকারের রাজস্ব আহরণ অনেক কম হলেও এর একটি বড় অংশই চলে যাবে সুদ পরিশোধে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে রাজস্ব আহরণের ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ২০১৯ অর্থবছরে ছিল আহরিত রাজস্বের ২০ শতাংশেরও নিচে। সূত্র: মুডিস ডটকম

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন