পিএনএস ডেস্ক: গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে যান শিক্ষার্থী ইসরাফিল। ব্যাংকে প্রবেশের আগেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চার জন তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে একটি গাড়িতে তোলে। এসময় ওই শিক্ষার্থীর কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেয় তারা। পরে আগারগাঁও স্কুলের পাশে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিদের গায়ে ছিল র্যাব লেখা জ্যাকেট।
এই ঘটনার পর ইসরাফিলের দুলাভাই মোর্শেদ ভুঁইয়া বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয় এই চক্রের পাঁচ সন্দেহভাজন সদস্য। তারা র্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করছিল বলেও পুলিশ জানায়।
গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা সুমন মিয়া, মো. মাসুদ রানা, আশরাফুল ইসলাম আপেল, ইকবাল হোসেন ইসলাম এবং সাইদুল হক।
পুলিশ জানিয়েছে, তিন মাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে র্যাব পরিচয়ে আবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করছিল চক্রটি। গেল তিন মাসে চক্রটি ৩০টির বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে ১০ কোটির বেশি
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর শ্যামলীতে তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি ইসরাফিল নামের এক ব্যক্তি শ্যামলী ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তুলে রিং রোড পূবালী ব্যাংকে জমা দিতে আসছিলেন। রিং রোডের মারুফ অপটিকস নামক চশমার দোকানের সামনে পৌঁছালে একটি প্রাইভেট কারে থাকা র্যাবের জ্যাকেট পরা তিন থেকে চার জন ব্যক্তি তার গতিরোধ করে। র্যাব সদস্য পরিচয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। পরে ইসরাফিলের চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। একপর্যায়ে তাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ব্যাগে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শেরেবাংলা নগর এলাকার একটি স্কুলের পাশে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
আজিম বলেন, র্যাব পরিচয়ে এমন স্পর্শকাতর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শ্যামলী এলাকা ও আশপাশের প্রায় ২০০ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এসময় একটি সন্দেহজনক গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনা হয়।
তিনি জানান, রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন প্রাইভেটকার ব্যবহার করে র্যাব পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরা ব্যক্তিদের গতিরোধ করতো। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোর করে গাড়িতে তুলে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেত। এই ধরনের ঘটনায় তুরাগ, গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণসহ দস্যুতার ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদপুরে ফের ডাকাতি করতে এসে ধরা
পুলিশ বলছে, ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ঘটনা ঘটানোর পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) টাউন হল ইউসিবি ব্যাংকের সামনে প্রাইভেটকারে অবস্থান করছিল চক্রটি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমন তথ্য পাবার পর পুলিশ তাদের আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেটকার, র্যাব লেখা কালো রংয়ের দুইটি জ্যাকেট, একটি কালো ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশ লেখা দুইটি স্টিকার উদ্ধার করা হয়।
তিন মাসে ২৫টি ঘটনার কথা স্বীকার
তিন মাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে অভিযুক্তরা ৩০টির বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলি জানিয়েছে। তবে অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় তিনটি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় একটি, হবিগঞ্জের মাধবপুর থানা এলাকায় একটিসহ ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় গত তিন মাসে মোট ২৫টি ঘটনার কথা সরাসরি স্বীকার করেছে।
এদের মধ্যে সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে ১১টি, মাসুদ রানার নামে ৬টি, আশরাফুল ইসলাম আপেলের নামে ১১টি ও ইকবাল হোসেন ইসলামের নামে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
পিএনএস/এএ
র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৫
26-09-2023 09:06PM