পিএনএস ডেস্ক: দেশজুড়ে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অবস্থান করছে সরকার। পরিবেশ দূষণরোধে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা ও আশপাশের ৫০০ অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৩৫০টি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় গাজীপুরের ১১টি ইটভাটাকে মোট ২৭ লাখ টাকা এবং টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার ৭টি ইটভাটাকে ৩৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
১০০ দিনের কর্মসূচি হিসেবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এক মাসের মধ্যেই প্রায় ৭০ শতাংশ অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এই গতিতে কাজ চললে অবশিষ্ট অবৈধ ভাটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
৩০ দিনের মধ্যেই প্রায় ৭০ শতাংশ অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এই গতিতে কাজ চললে অবশিষ্ট অবৈধ ভাটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সব বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। অবৈধ ইটভাটার প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। এ সময় বিভাগীয় কমিশনারদের অবৈধ ইটভাটা নিয়ে কিছু নির্দেশনাও দেন তিনি। এতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে তৎপরতা বাড়ানো, ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ব্লক ইট নির্মাণকে উৎসাহিত করা নিয়েও আলোচনা হয়।
পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সরকার পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ ইটভাটা শনাক্তকরণ ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তার জন্য ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার ব্যবহার করবে। পরিবেশ অধিদফতর ও সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে আইটি ও রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তিনির্ভর এ ট্র্যাকার তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকারের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার ও সফল হবে। ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার ব্যবহারের ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অত্যন্ত ক্ষতিকর ইটভাটা শনাক্ত করে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ হবে। এতে ইটভাটার কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণও কমে আসবে।
পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ ইটভাটা শনাক্তকরণে আইটি ও রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তিনির্ভর ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার তৈরি করেছে সরকার।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি সনাতন পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৪ বছরের মধ্যে এসব ইট পোড়ানো বন্ধ করার জোরদার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ২০২৮ সালের পর দেশে মাটির তৈরি ইট আর থাকবে না। সব জায়গায় বালু ও সিমেন্টের তৈরি ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে। ব্লক ইটে মাটি ব্যবহার করা হয় না, এতে বালু ও ফ্লাই অ্যাশ থাকায় পরিবেশ দূষণ হয় না।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উৎপাদনকারী ব্লক ইট উৎপাদনে এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে তারা ৩০০ কোটি ব্লক ইট উৎপাদন করতে পারেন। তারা নিজেদের কাজের পরিধি আরো বাড়াচ্ছেন।
ব্লক ইটে মাটি ব্যবহার করা হয় না, এতে বালু ও ফ্লাই অ্যাশ থাকায় পরিবেশ দূষণ হয় না। ২০২৮ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়ে আসি। ইটভাটার চুল্লির সঙ্গে চিমনিও ভেঙে দিই। পরে ভাটা মালিকরা আবার তা মেরামত করে ইট তৈরি করলে আমরা আবার ভাটাটি গুঁড়িয়ে দিয়ে আসবো।
পিএনএস/ সোহান
৩০ দিনে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩৫০ অবৈধ ইটভাটা
24-02-2024 05:59PM