শেখ হাসিনা অন্য দেশে যেতে না পারলে ভারত কী করবে?

  08-08-2024 08:02PM

পিএনএস ডেস্ক: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে একাধিক নাম উঠে এসেছে। কেউ বলছেন, তিনি ব্রিটেনে যাবেন। কেউ বলছেন, তিনি আমেরিকায় যেতে পারেন। আবার ফিনল্যান্ড কিংবা দুবাইয়ের মতো বিকল্পের নামও উঠছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, আপাতত দিল্লির কোনো গোপন আশ্রয়ে আছেন শেখ হাসিনা। ভারতে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ভারত সরকারও জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে আপাতত কিছু দিন সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর কী হবে, কোথায় যাবেন শেখ হাসিনা, তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে- তা নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। তবে কোনো পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

শেখ হাসিনা ঢাকা ছাড়ার পর অনেকে বলেছিলেন, তিনি লন্ডনে যেতে চান। ছোটোবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন হাসিনা। রেহানা নিজে ব্রিটিশ নাগরিক। তার কন্যা টিউলিপ ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি। সেই কারণে শেখ হাসিনাও ব্রিটেনে যাবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ব্রিটেন সবুজ সঙ্কেত দেয়নি শেখ হাসিনাকে। তাই আপাতত ভারতেই আছেন তিনি।

শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে এর পর একাধিক নাম উঠে এসেছে। কেউ বলেছেন, তিনি আমেরিকায় যেতে পারেন। সেখানে থাকেন হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয়। কেউ কেউ আবার বলেছেন, ফিনল্যান্ড কিংবা দুবাইয়ের মতো বিকল্পও রয়েছে তার হাতে।

বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে সরকারিভাবে কিছু না জানালেও ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভিকে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ব্রিটেনে পৌঁছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার অনুমতি কোনও ব্যক্তিবিশেষকে দেওয়া হয় না। ব্রিটেনের অভিবাসন আইনে সেই নিয়ম নেই। বরং কোনও ব্যক্তিবিশেষ দেশ ছাড়লে তার নিকটবর্তী সবচেয়ে নিরাপদ দেশেই আশ্রয় চাওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে, হাসিনা ভারতের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রে দাবি করেছিল, শেখ হাসিনার ভিসার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে আমেরিকা। তবে হাসিনাপুত্র জয় জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিটেন বা আমেরিকা, কোনও দেশেই রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি তার মা। বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিদায় জানানোর পরিকল্পনা তার আগে থেকেই ছিল। তিনি চলতি শাসনের মেয়াদ শেষ হলেই অবসর নিতেন।

শেখ হাসিনার ছেলে জয় যা-ই বলুন, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আমেরিকা আশ্রয় দেবে বলে মনে করছেন না অনেকেই। কারণ, হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খুব ‘মধুর’ ছিল না। এমনকি, কিছু দিন আগে বাংলাদেশে নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, সে সময়ে সেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আমেরিকা।

এদিকে, শেখ হাসিনা অন্য দেশে যেতে না পারলে ভারত কী করবে? স্থায়ীভাবে তাকে আশ্রয় দেবে কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে। তবে এ বিষয়ে ভারত দোটানায় রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা। শেখ হাসিনাকে স্থায়ী আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে যা নয়াদিল্লির কাম্য নয়। ইতোমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। ফলে নতুন সরকার গড়ে উঠলে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনই ভারতের লক্ষ্য হবে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। অতীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সময় শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল নয়াদিল্লি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবার ভারত কী করবে, তা সময়ই বলবে।

শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, হাসিনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাকে আপাতত কিছু দিন সময় দিচ্ছে ভারত। তিনি পরবর্তী পরিকল্পনা স্থির করলে ভারত সরকারকে তা জানাবেন। নয়াদিল্লি সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে।

হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনও মায়ের সঙ্গে তিনি দেখা করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে তিনি লিখেন, এই কঠিন সময়েও আমার মাকে দেখতে পারছি না, তাকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না... আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার পিটিআইকে টেলিফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তবে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে ফিরবেন কি না এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

জয় আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে ছেড়ে যাবে না, আওয়ামী লীগের কাউকেও ত্যাগ করবে না।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জয়।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন