জামায়াত আমীরের একটি স্ট্যাটাস, রাজনীতিতে কৌতূহল

  28-06-2022 06:26PM

পিএনএস ডেস্ক : পদ্মা সেতু নিয়ে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের দেয়া একটি স্ট্যাটাস রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি করেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি এ পর্যন্ত শেয়ার হয়েছে এক হাজার নয়শ’ বার। এতে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন। প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৩৫ হাজার।

ওই স্ট্যাটাসে জামায়াতের আমীর লিখেছেন, ‘যুগ-যুগ ধরে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে যাতায়াত ও যোগাযোগে সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে আসছিলেন। এমনকি মাঝে-মধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা লোকদের কারও কারও মৃত্যু ফেরিঘাটেই হয়েছে। চিন্তা করলে যা খুবই হৃদয়বিদারক। আজ তাদের সে কষ্টের অনেকখানিই অবসান হলো। মহান রবের দরবারে এজন্য শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। সেতু নির্মাণে যার যেখানে যতটুকু অবদান কিংবা ভালো-মন্দ, তার বিচারের ভার জনগণের ওপর। পৃথিবীতে যা কিছুই কল্যাণকর হয়, তার জন্য মহান প্রভুর শুকরিয়া আদায় করাই হচ্ছে মানুষের দায়িত্ব। আর মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত মানুষ বিনয়ী হয়। বিনয় হলো- ভালো মানুষের পোশাক। মহান আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করি- জনগণের ভ্যাট, ট্যাক্সের অর্থ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক ও কারিগরি অংশগ্রহণে যে সেতু তৈরি হলো, তা জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হোক। কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান, যানবাহনে উচ্চ হারের টোল যেন তাদের পুনর্বিবেচনায় স্থান পায়।’

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জামায়াতের আমীরের এই স্ট্যাটাসে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। তবে রাজনীতিতে দলটির অবস্থান পরিবর্তনের কিছু ইঙ্গিত এতে রয়েছে কিনা তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। জামায়াতের বর্তমানে নিবন্ধন নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগেরই মৃত্যুদণ্ড ইতিপূর্বে কার্যকর হয়েছে। এ অবস্থায় স্বভাবতই দলটির নেতারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে আমন্ত্রণ পাননি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও যাননি। বরং দলটির অনেক নেতাই সেতুটি নির্মাণের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন। এই পরিস্থিতিতে ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য জামায়াতের একটি স্বতন্ত্র অবস্থানের ইঙ্গিত করে। এমনিতে অনেকদিন ধরেই বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। অনেকেই বলছেন, দল দু’টির মধ্যে এখন সে অর্থে যোগাযোগ নেই। জোটও রয়েছে নামকাওয়াস্তে। এর আগে জামায়াত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এটা নিশ্চিত করেছিল যে, কোনো জোটে সম্পৃক্ত না থাকার ব্যাপারে একধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এক্ষেত্রে দলটি স্বতন্ত্রভাবে এগুনোর চেষ্টা করবে। যদিও নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকার ব্যাপারেও জামায়াতের ভেতরে একধরনের প্রবল মত রয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমানের স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরের বেশির ভাগ নেতা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই জন নেতা এ ব্যাপারে বলেন, এটি আমীরে জামায়াতের বক্তব্য। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না।

জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমীরে জামায়াত আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছেন। এ সেতুতে বাংলাদেশের মানুষের সবারই অবদান রয়েছে। তিনি যেটা বলেছেন, আমাদের সংগঠনের কালচারই হচ্ছে আমরা যা কিছু ভালো করতে সক্ষম হবো তার শুকরিয়া আদায় করবো। এই হিসেবে সেতুর বিষয়ে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এতে কোনো রাজনীতি নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত। তারপরও পদ্মা সেতু নিয়ে জামায়াতের আমীর সুন্দর লিখেছেন। রাজনৈতিক মতভেদ, বিরোধিতা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সরকারের অনিয়ম ও ভুল শাসনের সমালোচনা করার পাশাপাশি ভালো কাজের কিছু প্রশংসা করলে কিন্তু মর্যাদা নষ্ট হয় না। একটা সরকার তো আর সবই খারাপ করে না। কিছু ভালো কাজও করে।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন