ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেলেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি

  27-07-2022 12:56PM



পিএনএস ডেস্ক : দীর্ঘ ৮ বছর পর গত রোববার (২৪ জুলাই) রাতে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল সমালোচনা। এছাড়া হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদ না দিয়ে নতুনদের কমিটিতে জায়গা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, জেলার বাইরের উপজেলার বাসিন্দাদের জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।

কখনও ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেও তারা আজ জেলা কমিটিতে পদ পেয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ক্ষুব্ধ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। সদ্য গঠিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে বরগুনার পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র ক্লিন্টন হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল মারজান। সদ্য ঘোষিত ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন তিনি।

এছাড়া বিগত ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এই মারজান। একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ও চিহ্নিত মাদককারবারি কীভাবে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেল, এমন প্রশ্ন সবার।

এ বিষয়ে নিহত কলেজছাত্র ক্লিন্টন মজুমদারের বাবা অরূপ মজুমদার বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এই মারজান। সে এখন ছাত্রলীগের বড় নেতা। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। সৃষ্টিকর্তা সব দেখেছেন। তার কাছেই বিচার দিলাম।

বরগুনা ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা জানান, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে রাস্তায় নেমেছেন, দলের হয়ে কাজ করেছেন এমন অনেকেই পদ পায়নি কমিটিতে। অথচ যারা কখনও ছাত্রলীগ করেনি, যাদের কেউ কখনও মিছিল মিটিংয়ে দেখেনি এমন বহু লোক পদ পেয়েছে কমিটিতে।

এমনকি চিহ্নিত মাদককারবারি ও তুমুল আলোচিত মঠবাড়িয়ার ক্লিন্টন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মারজান পেয়েছে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এটা ছাত্রলীগের জন্য কলঙ্ক ও লজ্জার। এমন হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ত্যাগী নেতা হওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।

নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত মো. রুবেল বলেন, ত্যাগী, রাজপথে থাকা নেতাকর্মীদের কমিটিতে জায়গা হয়নি। অথচ হত্যা মামলার আসামি, কখনও দলীয় কার্যক্রমে অংশ না নেয়নি, বাইরে থেকে আসা এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন। কমিটির আগে যে জীবন বৃত্তান্ত নেওয়া হয়েছে তা বিবেচনা করা হয়নি।

জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন বলেন, মারজানকে ইউনিয়ন কমিটিতে নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের মানা ছিল। তিনি কীভাবে জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেল, তা আমার বোধগম্য নয়। হত্যা, ডাকাতি, মাদক মামলার আসামি পদ পেল জেলা কমিটিতে। দেখে আমি বিব্রত বোধ করছি। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।

বরগুনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুর রশীদ রাফি বলেন, জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র সভাপতি ও সম্পাদকের। আমি শুধু সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে তথ্য দিয়েছি। আমার দেওয়া তালিকায় মারজানের নাম ছিল না। এটা কেন্দ্র থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আবদুল্লাহ আল মারজানের বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। তবে এমন কেউ কমিটিতে থাকলে তাকে বাদ দেওয়া উচিত। তা না হলে ছাত্রলীগ কলঙ্কিত হবে বলে আমি মনে করি। মারজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে জুবায়ের আদনান অনিককে সভাপতি ও তানভীর হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সূত্র ; ঢাকা পোস্ট

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন