পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইলেন মির্জা ফখরুল

  19-08-2022 11:26PM

পিএনএস ডেস্ক : ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কি না এমন প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হল রুমে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই ব্যাখ্যা দাবি করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দুদিন আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুঙ্কার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলেছেন। এতই যদি আপনারা হুমকি-ধমকি দেন তাহলে আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য চেয়েছেন কেন? আমরা এই কথার ব্যাখ্যা চাই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছে। আজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, সে কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় যে এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে? এ কথার অর্থ মানুষ তো জানতে চাইবে, এটা অত্যন্ত জরুরি কথা।

তিনি বলেন, আজকে প্রশ্ন উঠেছে- বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে কি থাকবে না। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি করবে না। আজকে এই প্রশ্নগুলো কেন আসছে। কারণ আমরা দেখলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছে। মানুষের পাঁচ বছর পরপর একদিন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবার সুযোগ ছিল, সেই ভোট দেওয়ার ক্ষমতাকে তারা হরণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বাতিল করেছে।

উত্তরার গার্ডার দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে

উত্তরার গার্ডার দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সেতুমন্ত্রী যিনি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি অনেক কথা বলেছেন। আমি যে কথাটা বলতে চাই, আপনারা যদি এতই দক্ষ হন, তাহলে উত্তরায় গার্ডার পড়ে এক পরিবারের পাঁচজন মানুষ সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। প্রতিদিন রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ কোথাও কোনো নিয়ম নেই, কোথাও কোনো শাসন নাই, সুশাসন নাই। সবখানে যে যেখানে পারছে লুট করছে, দুর্নীতি করছে, টাকা লুটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যার জন্য কেউ কোনো কথা মানে না

তিনি বলেন, উত্তরার ঘটনায় গ্রেফতার করলেন কাকে? ওই ড্রাইভারকে, গ্রেফাতার করলেন কাকে? গার্ডকে। কেন? এই কথার জবাব তো দিতে হবে সেতুমন্ত্রীকে প্রথম, জবাব দিতে হবে ডাইরেক্টর জেনারেলকে, জবাব দিতে হবে প্রজেক্ট ডাইরেক্টরকে। তাদের বিরুদ্ধে তো এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটের দেওয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, তিনি যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলেছেন, এখানে র‌্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সব প্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের ইলিয়াস আলীর আজকে তার ছেলের বিয়ে আছে। কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্র নেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে।

‘আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয় ওই নেত্র নিউজ আপনারা সবাই দেখেছেন, আয়না ঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়না ঘর কতটুকু সত্যি, কিবা আছে তা বলতে হবে। জনগণ জানতে চায়।’

‘সরকারকে আর সময় নয়’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না, আমরা আওয়ামী লীগে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া হবে না। এখন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাস্তায় রাজপথ দখল করে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এসএম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন