চিঠির জবাবও দেবে না বিএনপি

  29-03-2023 08:38AM




পিএনএস ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক কোনো ধরনের সংলাপে বসবে না বিএনপি। সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেয়া চিঠির জবাবও দেবে না দলটি। তবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের অবস্থান জানানো হবে। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ইসির চিঠি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দলের স্থায়ী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে শুরু থেকেই বর্জন করে আসছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডেকেছিল ইসি। সে সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে মতবিনিময়ের জন্যও দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে আমন্ত্রণেও সাড়া দেয়নি বিএনপি।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে চিঠি দেন সিইসি। গতকাল সোমবার বিএনপির মহাসচিব এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার নাটক করে। নির্বাচন কমিশন সংলাপের জন্য আমাদের চিঠি পাঠায়। আমরা তো বলেছি, সঙ্কট একটাই, নির্বাচন কীভাবে হবে, কোন ব্যবস্থায় হবে। নির্বাচন অবশ্যই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা বললে সেই বিষয়ে কথা হবে, অন্য কোনো বিষয়ে কথা নয়।’

বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, তারা এখনো বিএনপির কোনো চিঠি পাননি। যেহেতু তারা বিএনপিকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাই বিএনপির যেকোনো সাড়া চিঠির মাধ্যমে পেতে হবে। বিএনপির যেকোনো বক্তব্য চিঠির মাধ্যমে আসাটাই কাক্সিক্ষত। সেটা পেলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা আলোচনায় এলে কী আলোচনা হবে, তা সময় বলে দেবে। আলাপচারিতার মধ্যে সেটা ফুটে উঠবে। এ বিষয়ে আগাম কোনো বক্তব্য বা ধারণা তিনি দিতে পারছেন না।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিএনপি আলোচনায় আসতে সম্মত হলে তারিখ ঠিক করা হবে। বিএনপি যদি আলোচনার বিষয় (অ্যাজেন্ডা) ঠিক করে দেয় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হতে হবে, তাহলে ইসি আলোচনায় যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তারা যদি আলোচনার অ্যাজেন্ডা ঠিক করে দেয় তখন আমরা কী করব, তখন কমিশন সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এ মুহূর্তে আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারছি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের এই আমন্ত্রণ সরকারের কূটকৌশলের অংশ মনে করে বিএনপি। দলের নেতারা বলেন, সরকারের পরামর্শে সংলাপের চিঠি দেয়া হয়েছে। এটা এক ধরনের নাটক, যার অংশ হতে চায় না দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের আগেই আছে। বিএনপি শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের সংলাপে যাবে। অন্য কোনো আলোচনায় অংশ নেবেন না।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। আর নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাদের সাথে আলোচনায় বসার কোনো যৌক্তিকতাও নেই।

স্থায়ী কমিটির নেতারা বলেন, চিঠির জবাব দেয়া হলে সেটির একটি গুরুত্ব আছে। তাই আমন্ত্রণপত্রের কোনো জবাব দেয়া যাবে না। বরং নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ এই উদ্যোগ নিয়ে নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। বৈঠকে এই আমন্ত্রণকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নেতারা। কারো মন্তব্য ছিল, বিদেশীদের চাপে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। কেউ বলেছেন, সরকার জানুয়ারির আগে নির্বাচন করতে চায়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আগেভাগে আলোচনা শুরু করছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, চিঠির ভাষাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এটা নির্বাচন কমিশনের এক ধরনের কৌশল। সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লোক দেখানো নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন কমিশন। এদিকে রমজানে যে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা পালনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং ১০ দফা দাবিতে মহানগর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ১ এপ্রিল থেকে অবস্থান-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

১ এপ্রিল সকল মহানগর ও জেলায় বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, ৮ এপ্রিল সকল মহানগরের থানা ও জেলা-উপজেলার থানায় বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ১০ দফার প্রচারপত্র, রাষ্ট্র মেরামতের প্রচারপত্র এবং আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রচারপত্র বিলি/ মানববন্ধন/অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

ইউনিয়ন পর্যায়ের এই কর্মসূচি বিভাগ অনুযায়ী হবে। ৯ এপ্রিল রংপুর বিভাগে, ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে এবং ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগে হবে। ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের সকল মহানগর-জেলা-উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভা, দুস্থ অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।

রমজানে এই কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রমজান মাসে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া কথা নয়। কিন্তু আজকে দেশের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে আমরা বাধ্য হয়েছি এই রমজান মাসেও আমাদের সাধারণ মানুষকে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার যে আন্দোলন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার যে আন্দোলন, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের যে আন্দোলন, সর্বোপরি এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন তাকে আমরা চলমান রাখতে চাই সেজন্য আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আশা করব, এই কর্মসূচিগুলোতে দেশে আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করবেন এবং তাদের যে অধিকার ভোট দেয়ার অধিকার, তাদের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকারগুলো বাস্তবায়িত করবার জন্য তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন