পিএনএস ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচি’র সমর্থনে দলের নেতাকর্মীকে সতর্কতার সঙ্গে সর্বাত্মক মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে এ আন্দোলন যাতে কোনোভাবেই রাজনীতিকীকরণ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছে দলটির হাইকমান্ড। সাধারণ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকেই নজর দিতে বলা হয়েছে। শুধু দলের নেতাকর্মীই নয়, দল-সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকেও সক্রিয় করেছে বিরোধী দলটি। তারাও অভিন্ন ইস্যুতে জনমত তৈরির পাশাপাশি চলমান এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির নেতারা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে দলের পক্ষ থেকে নৈতিক সমর্থন জানানো হয়। অবশ্য আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়ানোর বিষয়ে সতর্ক ছিল দলটি। মাঝে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ ওই সময়েই আন্দোলনে জড়িত হওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলে আরেক পক্ষ ধীরে এগোনোর পক্ষে মত দেয়। যদিও দলের হাইকমান্ডের এমন দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যেও কোনো নির্দেশনা ছাড়াই সারাদেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থক শ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে থেকে আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে ভূমিকা পালন করেন। তবে এখন আন্দোলন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে মাঠের নেতাদের দলের হাইকমান্ড নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম মহাসচিবসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সারাদেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কোন নেতারা কে, কোথায় কী ভূমিকা রাখছেন– সে বিষয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা খোঁজখবর নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানাচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। এখন এ আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সব রকমের সহযোগিতাও থাকবে। যেহেতু এটা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সে জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য, সেই দায়িত্ব-কর্তব্য আমরা পালন করছি। আমরা করতে থাকব। সারাদেশে নেতাকর্মীও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে– এ আহ্বান রইল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের এক দফা– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও সমমনা দলের দাবি এক ও অভিন্ন। এ দাবিতে ছাত্র-জনতা, কবি-সাংবাদিক-শিক্ষক-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমেছে। কিন্তু এসব মানুষের ওপর সরকারের আইনশৃঙ্খলা বা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠন কোনো ধরনের আক্রমণ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির এক নেতা বলেন, দলীয় নির্দেশনার আগেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্রদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য-শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্বজনরাও মাঠে আছেন। এখন সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দলের নেতাকর্মীকে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় ব্যানার ছাড়া নেতাকর্মীকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দলীয় সমর্থক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সহযোগী সংগঠন এবং যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমমনা রাজনৈতিক দল ঘোষিত কর্মসূচিতে নেতাকর্মীকে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। গত কয়েক দিন সে অনুযায়ী কার্যক্রম করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আন্দোলনরত ছাত্র-অভিভাবকদের পাশে সক্রিয়ভাবে আছি।’
পুনর্গঠনে নতুন দায়িত্বে যারা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার নেতাদের জায়গায় নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলমান আন্দোলনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব ও সদস্য সচিব আমিনুল হক গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দুই পদে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মহানগর উত্তরের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে সমন্বয়ক ও আক্তার হোসেনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু কারান্তরীণ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিকে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল মহানগরের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন সিকদার কারান্তরীণ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনকে বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা কারান্তরীণ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের বিলুপ্ত চার কমিটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। আন্দোলনের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন অনেকটা কঠিন হওয়ায় আগের কমিটিই আবার বহাল রাখা হয়েছে।
পিএনএস/আনোয়ার
নেতাকর্মীকে মাঠে থাকার নির্দেশনা বিএনপির
04-08-2024 10:36AM