ধর্ষিতার নয়, ধর্ষকের ছবি ভাইরাল করুন!

  02-01-2019 08:21PM

পিএনএস (মুহাম্মদ সাইদুজ্জামান আহাদ) : ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়লাভের কয়েক দিনের মধ্যেই যে ঘটনাটা বিএনপি-জামাতের ক্যাডারেরা ঘটিয়েছিল কিশোরী পূর্ণিমা রানী শীলের সঙ্গে, সেই ঘটনাটাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলো সুবর্ণচরের এই অমানুষগুলো, যারা হয়তো ভোটের দিনও জয় বাংলা বলে স্লোগান দিয়েছে! এই পশুদের কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগানটা শুনলে জয় বাংলারই অপমান হচ্ছে, এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক!

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ধর্ষণের ঘটনাটা এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বা দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা বা মারধরের ঘটনাগুলো আমাদের দেশে খুব কমন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই একটা অংশ এগুলো। কিন্ত আওয়ামী লীগের নামধারী কিছু লোকজন যেটা সুবর্নচরে করেছে, সেটা শিউরে ওঠার মতোই।

নির্যাতিতা ভদ্রমহিলা এবং তার পরিবারের সুস্পষ্ট অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদেরকে। পাংখার বাজার ১৪ নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেয়ার সময়ই ওই মহিলাকে হুমকি দিয়েছিল সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের লোকজন৷ আর রাতে দলবেঁধে হামলা চালানো হয় তাদের বাড়িতে। পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলা হয়, আর দরজা খোলার পরে অস্ত্রের মুখে সবাইকে বেদম মারধর করা হয়, আর সেই মহিলাকে করা হয় গণধর্ষণ।

নির্যাতিতা সেই মহিলার ছবি এবং ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ফেসবুকে। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ঘটনাটা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেনি সবাই। তবে পহেলা জানুয়ারী থেকেই ভাইরাল হওয়া শুরু হয় এই সংক্রান্ত খবর এবং ছবিগুলো। সেসব ছবি দেখে যে কারো হৃদয় কেঁপে উঠতে বাধ্য। নির্যাতনের কালসিটে দাগগুলো এখনও তার শরীরে বিদ্যমান, গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ভর্তি আছেন হাসপাতালে। কিন্তু সেই ধর্ষকের ছবি ভাইরাল হয় না।

জবানবন্দীতে নির্যাতিতার স্বামী জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসীদের চিনে ফেলায় তারা আমার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করে। তবে সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে তার জীবন ভিক্ষা চাই। ভোর ৪টার দিকে আমার স্ত্রীকে বাড়ির উঠানে ফেলে চেলে যায়। সকালে আমি আমার স্ত্রীকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে গেলে স্থানীয় সন্ত্রাসী রহুল আমিন মেম্বার ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বা সাংবাদিকদের জানালে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সোমবার দুপুর ১টার দিকে ভর্তি করা হয়।”

তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে, এই ঘটনা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন, এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশ। মামলা নেয়া হয়েছে, দুইজন অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতিতা মহিলার মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তিনি বেঁচে আছেন এবং এই মূহুর্তে আশংকামুক্ত আছেন বলেও জানানো হয়েছে৷

অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বিএনপির আমলে পূর্ণিমা তার ওপর হওয়া নির্যাতনের বিচার পায়নি, উল্টো তখন ‘জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এটা ঘটেছে’ বলে দাবী করেছিল তৎকালীন প্রশাসন৷ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সেরকম শাক দিয়ে কেউ মাছ ঢাকার চেষ্টা করেনি, এজন্যেও প্রশাসনকে একটা ধন্যবাদ জানানো উচিত।

তবে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত রুহুল আমিন মেম্বারের নাম বাদ দিয়েই এজাহার দাখিল করা হয়েছে, তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে একটা মহল। অথচ এই অমানুষটাই ধর্ষিতাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছিল, হুমকি দিয়েছিল, এই ঘটনা জানাজানি হলে নির্যাতিতার পুরো পরিবারকে শেষ করে দেয়া হবে! অথচ এখন এই মানুষের গড়ন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো শুয়োরটাকে বাঁচানোর জন্যে কিছু অমানুষ উঠেপড়ে লেগেছে!

আমরা চাই, এই ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যারা নির্যাতন করেছে, যারা নির্যাতিতাকে হুমকি দিয়েছে, এবং যারা নিপীড়কদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে, সবাইকে জেলে ভরা হোক, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। ধর্ষকের কোন দল নেই, কোন ধর্ম নেই, এটা আমরা বিশ্বাস করি। ধর্ষকের ছবি ভাইরাল করুন।

যে বঙ্গবন্ধু একাত্তরের নির্যাতিতা নারীদের বাবার নামের জায়গায় তার নাম লিখে দিতে বলেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দলের নাম ভাঙিয়ে কতগুলো নিকৃষ্ট পশু বিরোধীপক্ষে ভোট দেয়ায় কাউকে ধর্ষণ করবে, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না। এরা শুধু সুবর্ণচরের ওই নারীকে ধর্ষণ করেনি, এরা বাংলাদেশটাকে ধর্ষণ করেছে, এরা বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছে!

পূর্ণিমার সাথে যে অন্যায়টা হয়েছিল, সেটার বিচার বিএনপি করেনি। আওয়ামী লীগ বিএনপির সেই পথে হাঁটবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি। কোন ধর্ষকের মুখে জয় বাংলা শ্লোগান শুনতে চাই না, কোন নারী নিপীড়কের মুখে জাতির পিতার নাম শুনতে চাই না। এতে জয় বাংলার সম্মানহানি হয়, জাতির পিতাকে অপমান করা হয়৷

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন