মানুষ কতোটা খারাপ হতে পারে?

  11-02-2019 02:48PM

পিএনএস :৬ ফেব্রুয়ারি, ১০ বছরের এক মেয়ের মা অভিযোগ তুলেছেন তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে। ভয়াবহ, গুরুতর, গা কেঁপে উঠা বিভৎস সেই অভিযোগ হলো- ‘স্কুলে পৌছানোর পথে মেয়েটির বাবা তাকে ধর্ষণ করেছে, দিনের আলোয়, গাড়িতে, মনোয়ারা হাসপাতালের আগে চিপা গলিতে, যেখানে কলেজের স্টুডেন্টরা আড্ডা দেয়’।

পরদিন এই অভিযোগে রমনা থানায় মামলা হয়েছে।

একাধিন অনলাইন পোর্টালে ৬ তারিখে প্রকাশিত খবরে শিশুটির মা বলছেন- মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় দুই শিশু নিয়ে থাকেন তিনি । খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় থাকেন তার সাবেক স্বামী সাহেদুল্লাহ। আড়াই বছর আগে তাদের আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তালাকের পর প্রায় ৫-৬মাস বাবার কাছে ছিল শিশু দুটি। ২ বছর ধরে শিশু দুটি মায়ের কাছে আছে। ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে বাবা সাহেদুল্লাহ শিশুটিকে বাসা থেকে গাড়িতে করে স্কুলে নিয়ে যায়। ওইদিনই দুপুরে শিশুটি একাই স্কুল থেকে বাসায় এসে তার মাকে জানায় তার পেটে ব্যথা। কারণ জানতে চাইলে বাবাকে কিছু না বলার শর্তে মাকে জানায়, রাস্তায় গাড়ির মধ্যে বাবা তাকে নির্যাতন করেছে। এর আগেও বাসায় একাধিকবার শিশুটির সঙ্গে বাবা একই কাজ করেছে বলেও সে মাকে জানায়।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শিশুটির মাকে বলতে শোনা যায়–‘তাকে স্কুলে নিয়ে যাবার কথা। যেহেতু সে বলেছিল গাড়ি বিক্রি করে দেবে লাস্টটাইম, এইজন্য তাকে যেতে দিয়েছি। যদিও আমরা সেপারেটলি থাকি, বেবি আমার কাছে থাকে। আমি নরমালি দিতে চাই না। বাট অলওয়েজ আমাকে টর্চার করা হয়, মারধর করা হয়, কিক আউট করে দরোজা দিয়ে ঢুকা হয়। -আমি কখনো মিডিয়া আইনের কাছে সহযোগিতা পাই নাই। আমি একাধিক জিডি করেছি, ৯৯৯এ ফোন করেছি। ইন্সট্যান্ট কোনও সহযোগিতা পাইনি। প্রথম যে ৫-৬ মাস বেবি তার কাছে ছিল একাধিকবার বেবির ক্ষতি করেছে। আমার কাছে আসার পর মেয়ে বলতো, আমার কথা মনে হতো তার, আর কান্না করতো, কারণ তার পেটে ব্যথা করতো। একবার স্কুলেও বমিও করেছিল। ‘যখন পেট ব্যথা করতো বাবা তখন কি করতো এই প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি তার বাবার কোনও ক্ষতি না করার শর্তে বলেছিল- পাপা আমার…. । এবং এটার সাক্ষী আমার ছোট ছেলে।’ এর আগেও ১৩ বছরের কাজের মেয়েকে সে… করেছিল। প্রেগনেন্ট হয়েছিল। যার কারণে ডিভোর্স দিয়েছি। পুলিশকে এর আগেও আমার মেয়েটি সবিস্তারে সব বলেছে কিন্তু তারা কেইস আকারে নেয়নি।

এখন আইন সহযোগীতা না করলে আমি নিজেকে খুন করবো’।

একাত্তর জার্নালে শিশুটির মা ফোনোতে জানান-

•ডাক্তাররা তাকে বলছেন মেয়ের জামা কাপড় রক্তাক্ত। আরো কাপড় চোপড় নিয়ে যেন যান। রিপোর্টে ধর্ষনের কথা স্পষ্ঠ কীনা উত্তরে বললেন ‘ওকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে এটা স্পষ্ঠ’।

•ডিসি স্যারের সামনে আমার মেয়ে মৌখিক বর্ণনা দিয়েছে। একটা শিশুতো বারবার একই ঘটনার বর্ণনা দিলে একবার হলেও ভুল করতো, যদি সেটা মিথ্যে হতো।’

-

এই ভয়াবহ অভিযোগের ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়া যখন সোচ্চার, তখন গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে অভিযুক্ত পিতার বক্তব্যও পাওয়া যায়।
একাত্তর জার্ণালে ফোনোতে অভিযুক্ত পিতা বলতে চায়- ‘আমার সন্তানের মা, সে দুষ্টু চরিত্রের মহিলা ছিল। এর আগেও বিভিন্ন ভাবে ফাঁসানোর জন্য সেম কাহিনী নিয়ে গিয়েছিল। ব্যর্থ হয়েছে। বাবা-এবং সন্তানের পবিত্র রিলেশন নিয়ে সে গল্প বানিয়েছে। এই মহিলা ক্রেক মহিলা। আমার সঙ্গে ডিভোর্সের পর আরেকটা বিয়ে করেছিল। তার সঙ্গেও ডিভোর্স হয়, পরে সেই ছেলেকে ফাঁসানোর জন্য নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে ছেলের নামে এটম টু মার্ডারের মামলা দেয়। ছেলেকে জেলের ভাত খাওয়ায়।’

অভিযুক্ত পিতা একাত্তর জার্নালে আরো বলছেন- ‘আমার নামে সে যৌতুকের মামলা করেছিল। এটা চলমান। কিছুদিন আগে আমার সন্তানদের নিজের কাছে নেবার জন্য মামলার প্রস্তুতি নেই। এটা সে জানার পর সে আমাকে দেখে নেবার হুমকি দেয়। সে আমাকে বলেছিল- ‘তুই জানসনা আমি খারাপ হলে কতো খারাপ হতে পারি’।

তিনি বলেন ‘বাসা থেকে স্কুল পর্যন্ত কোনও নিরিবিলি জায়গা নেই। আমার গাড়ির কাচ হচ্ছে ক্লিয়ার। দিনের আলোতে আমার মেয়ে কেন আমার গার্লফ্রেন্ডকেও যদি কিছু করি রাস্তায় কি লোকজন নেই?’

অনলাইন নিউজপোর্ট াল৬ তারিখের খবরে, অভিযুক্ত পিতার দাবি

‘তালাকের আগে থেকেই তাদের মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়। সে নিজেই আমাকে তালাক দেয়। তারপর থেকেই কয়েকটি থানায় আমার বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করে। থানা পুলিশ কোন প্রমাণ পায় না। পরে মামলা তুলে নেয়।’

‘মেয়ের মা অন্য কাউকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে। শুনেছি আমার মেয়ের শরীরে ধর্ষনের আলামত মিলেছে। কে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে? তার বিচার চাই।’

-

মাথার ভিতর খটকা গিজগিজ করে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এই খবরের ফলোআপ খুঁজি, পাই না।

পত্রিকার রিপোর্টার বন্ধুদের ফেসবুকে নক দিলে উত্তর আসে ‘ঘটনার ভিতরে ঘটনা আছে’।
•২ বছর আগেই শিশুটি পিতা কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে আসলে, অভিযুক্ত পিতা সাবেক আর্মি অফিসার বলে কোনও থানাই মা কিংবা শিশুটির কথা আমলে নিচ্ছিল না, এটা সত্য কিনা জানা দরকার।

•৫ তারিখ মঙ্গলবার বাবার সঙ্গে গাড়িতে করে গেলেও ওইদিনই দুপুরে শিশুটি একাই স্কুল থেকে বাসায় আসে বলে মার দাবি। কীভাবে এলো? স্কুল থেকে একা কীভাবে ফিরলো?

•যে গাড়িতে ধর্ষণের কথা বলা হচ্ছে সেই গাড়ির ড্রাইভার কই ছিলো? গাড়ির ড্রাইভার আদৌ ছিল কিনা?

•শিশুটির মা বলছেন ধর্ষণের শিকার হয়েছে মর্মে তিনি রিপোর্টের ফটোকপি হাতে পেয়েছেন। কিন্তু একই দিন ঢামেক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম সাংবাদিকদের বলছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সব পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানাবেন। সব পরীক্ষার প্রতিবেদন কি হাতে এসেছে?

•শিশুটির মা বলছেন ‘ডাক্তাররা বলেছেন মেয়েটির জামা রক্তাক্ত। তিনি কেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার সময় রক্তাক্ত জামা দেখতে পেলেন না?

* ডিএনএ টেস্টের যে দাবি উঠেছে সর্বত্র সেটা কেনো হয়নি এখনো?

আমি চাই-

•চিকিৎসকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া মহিলার বক্তব্যর সত্যতা যাচাই হোক • ডিএনএ টেস্ট হোক• অভিযুক্ত পিতাকে অতিদ্রুত এরেস্ট করে কোনও পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক তদন্ত হোক। তা না করলে মানুষের মনের মধ্যে যে অবিশ্বাসের বিষ রোপিত হয়েছে, ঘৃণার ও ক্ষোভের জন্ম হয়েছে সেটা সহজে প্রশমিত হবে না। যদি সত্যি সে অভিযুক্ত হয় এমন শাস্তি হোক, এটা যদি মানসিক রোগও হয় বাকি রোগীরা যেন এই শাস্তি দেখে সুস্থ হয়ে যায়।
•আমি চাই পিতা কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবরটি মিথ্যা হোক। না হলে একটা পুরুষাঙ্গের মালিক হিসেবে নিজেকে নরকের কীট ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না।

লেখক: সেজুল হোসেন। কবি , গীতিকার ও সাংবাদিক

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন