রশিদ-তেওয়াটিয়া ঝড়ে উড়ে গেল হায়দরাবাদ

  28-04-2022 01:39AM

পিএনএস ডেস্ক : সাবেক দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ম্যাচটা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না রশিদ খানের। বল হাতে আরেকটু হলে অর্ধশতকই ছুঁয়ে ফেলছিলেন। তবে ব্যাট হাতে শেষ ওভারে সে যেন সুদে আসলে পুষিয়ে দিলেন আফগান মহাতারকা। মার্কো ইয়ানসেনের সেই ওভারে মারলেন তিন ছক্কা, তাতে শেষ ওভারে ২৫ রান তুলে জেতার অবিশ্বাস্য কাজটাও করে বসেছে গুজরাট টাইটান্স। জিতেছে পাঁচ উইকেটের ব্যবধানে। তাতে আট ম্যাচ শেষে আইপিএল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও চলে এসেছেন রশিদরা।

দিনের শুরুটা অবশ্য তেমন কিছুর আভাস দেয়নি মোটেও। টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা গুজরাট শুরু থেকেই ঝড়ের মুখে পড়েছে। পাওয়ারপ্লেতে কেন উইলিয়ামসন আর রাহুল ত্রিপাঠিকে ফেরালেও দিয়ে বসেছিল ৫৩ রান, যা হায়দরাবাদকে দিয়েছিল বড় রানের ভিত।

এরপর সেই ভিতে দাঁড়িয়ে অভিষেক শর্মা আর এইডেন মার্করাম মিলে রানটা বড় করার কাজটা করে গেছেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেছেন ৬০ বলে ৯৬ রান। তবে এরপরই যেন কিছুটা ছন্দপতন ঘটে দলটির। দলীয় ১৪০ রানে অভিষেক ফেরেন ৪২ বলে ৬৫ রান করে। এরপর নিকলাস পুরান ফেরেন দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই। ১৮তম ওভারের শেষ বলে যখন ৪০ বলে ৫৬ করা মার্করাম বিদায় নিলেন, দলের রান তখন ১৬২; 'লড়াকু' সংগ্রহটা বড় রানে রূপ দেওয়ার আশায় তখন ঢেকে গেছে ধোঁয়াশায়। এক বল পর ফিরলেন ওয়াশিংটন সুন্দরও। শঙ্কাটা গাঢ় হলো আরও।

১৬২ থেকে যে দশ বলের ব্যবধানে ১৯৫ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে হায়দরাবাদের সংগ্রহ, সেটার কৃতিত্বের সিংহভাগ পাবেন শশাঙ্ক সিং। সাতে নেমে তিনি খেলেছেন ৬ বলে ২৫ রানের দারুণ এক ক্যামিও। মেরেছেন একটি চার আর তিনটি ছয়। তাতেই গুজরাটকে রান পাহাড়ে চাপা দেয় হায়দরাবাদ। প্রতিপক্ষের এমন সংগ্রহের দিনে গুজরাটের বোলারদের দিনটা স্বাভাবিকভাবেই কেটেছে খুব বাজে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝড়টা গিয়েছে রশিদ আর দলটির আরেক বিদেশি বোলার লোকি ফার্গুসনের ওপর দিয়ে। রশিদ বল হাতে চার ওভারে দিয়েছেন ৪৬, আর লোকি ফার্গুসন ফিফটিই করে ফেলেছেন রীতিমতো, দিয়েছেন ৫২ রান।

তবে রান পাহাড়ে চাপা পড়ে গুজরাট আশা হারায়নি মোটেও। ঋদ্ধিমান সাহা আর শুভমান গিলের সৌজন্যে পাওয়ারপ্লেতেই তুলে ফেলে ৫৯ রান। তবে দৃশ্যপট বদলে গেল উমরান মালিককে আক্রমণে আনতেই। কাশ্মিরের এই বোলার এসেই ১৪৪ গতির বলে বোল্ড করে ফেরান গিলকে। এরপর যখনই আক্রমণে এসেছেন, তার ১৫০ কিলোমিটার ছোঁয়া গতির সব বলে গুজরাটের ত্রাহি মধুসূদন দশা হয়েছে তখনই। দশম ওভারে ফিরিয়েছেন বিপদজনক হার্দিক পান্ডিয়াকে। তবে গুজরাটের আশার আলো হয়ে তখনো ছিলেন ঋদ্ধিমান। ৩৮ বলে ১১ চার আর একটি ছক্কায় তুলে ফেলেছিলেন ৬৮ রানও। তাতে চাপটা মোটেও টের পাচ্ছিল না নবাগত দলটা।

১৪তম ওভারে আক্রমণে এসে উমরান ফেরালেন সেই ঋদ্ধিমানকে। ১৬তম ওভারে এসে ফেরালেন আরেক 'ডেঞ্জারম্যান' ডেভিড মিলারকে, সঙ্গে অভিনব মনোহরকেও ফেরালেন সাজঘরের পথ, পেয়ে গেলেন। ১৬তম ওভারের শেষে ১৪০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে তখন সমূহ বিপদে পড়ে গেছে গুজরাট। এরপরই শুরু রাহুল তেওয়াটিয়া আর রশিদের পালটা আক্রমণের।

মনোহরের বিদায়ের সময় শেষ চার ওভারে রশিদদের প্রয়োজন ছিল ৫৬ রান। তবে স্বস্তির বিষয় ছিল, উমরানের ওভার গিয়েছিল শেষ হয়ে। সেটাই যেন গুজরাটের কাজটা সহজ করে দিয়েছিল অনেকাংশে। নটরাজনের ১৭তম ওভার থেকে এল ৯। ভুবনেশ্বর কুমারের পরের ওভারে একটা ছক্কা হাঁকালেও তেওয়াটিয়া তুলতে পারলেন ১২ রান, তাতে সমীকরণটা কঠিন হলো আরও, ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। নটরাজনের শেষ ওভার, আর গুজরাট ইনিংসের ১৯তম ওভারে যখন রশিদ আর তেওয়াটিয়া মিলে তুলতে পারলেন মাত্র ১৩ রান, তখন কাজটা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবই মনে হচ্ছিল গুজরাটের, শেষ ওভারে যে প্রয়োজন ছিল ২২ রান!

তবে আধুনিক ক্রিকেটে এ আর তেমন কঠিন কিসে! শেষ ওভারের প্রথম বলটা যখন মিড উইকেট দিয়ে সীমানাছাড়া করলেন তেওয়াটিয়া, তখন এ কথাটা ভালোভাবেই বিশ্বাস করা শুরু করে গুজরাট। পরের বলে এল সিঙ্গেল। তৃতীয় বলে রশিদ ছক্কা হাঁকালেও পরের বলে দিলেন ডট। তাতে শেষ দুই বলে সমীকরণটা এসে দাঁড়ায় নয় রানের। তবে পরের দুই বলে এক্সট্রা কভার আর ফাইন লেগের ওপর দিয়ে দুই ছক্কায় অবিশ্বাস্য জয়টা ঠিকই তুলে নেন রশিদ। ৫ উইকেটের এই জয়ে ৮ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও চড়ে বসে গুজরাট।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন