স্পেনে খেলেন, স্পেনেই বাস, তার হাতেই হল স্পেনের সর্বনাশ!

  07-12-2022 01:11PM



পিএনএস ডেস্ক: নাম তার ইয়াসিন বোনো। দীর্ঘ দিন ধরেই ক্লাব ফুটবল খেলছেন ইউরোপের দেশ স্পেনে। বর্তমানে স্পেন দলে যেসব ফুটবলার খেলছেন, তাদের অধিকাংশই তার সুপরিচিত। সেই ইয়াসিন বোনোর হাতেই সর্বনাশ হল স্পেনের। বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হল ২০১০-এর চ্যাম্পিয়নদের। কাতার বিশ্বকাপ সাক্ষী থাকল আরও একটি অঘটনের।

মরক্কোর নকআউটে উঠাকে অনেকেই অঘটন মনে করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবারের পারফরম্যান্স সেই ধারণা বদলে দিতে বাধ্য করল। মরক্কোর দুর্দান্ত ফুটবলের শেষটা হল ইয়াসিন বোনোর হাতেই, যাকে সতীর্থ থেকে সমর্থকরা আদর করে শুধু ‘বোনো’ বলেই ডাকেন। পেনাল্টি শুটআউটে স্পেনের দুই ফুটবলারের শট রুখে দেন তিনি।

পেনাল্টি বাঁচানোয় এই প্রথম নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই সুখ্যাতি রয়েছে মরক্কোর এই গোলকিপারের। ফুটবলজীবনে এখনও পর্যন্ত ৫০টি পেনাল্টির সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাঁচিয়েছেন ১৩টি। অর্থাৎ ২৬ শতাংশ ক্ষেত্রে তিনি পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন। মঙ্গলবার স্পেনের নামীদামি তারকারা পেনাল্টি নিতে এলেও তিনি ছিলেন অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসী। দিনের শেষে তার হাতেই আটকে গেল স্পেন।

মরক্কোর হয়ে খেললেও বোনোর জন্ম কানাডার মন্ট্রিলে। খুব ছোটবেলাতেই তার পরিবার চলে আসেন মরক্কোয়। ওয়াইদাদ কাসাব্লাঙ্কার হয়ে যুব ফুটবলে খেলা শুরু করেন বোনো। সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ২০১১ সালে। তার এক বছর আগেই প্রথম ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়েছিল তার ক্লাব। এক বছর কাসাব্লাঙ্কায় কাটিয়েই বোনো পাড়ি দেন ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্ত স্পেনে। যোগ দেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। প্রথমে তিনি রিজার্ভ দলে ছিলেন। এরপর মূল দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পান। চার বছরের চুক্তি করেন অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে।

২০১৪ সালে অ্যাটলেটিকো ছাড়েন দুই গোলকিপার থিবো কুর্তোয়া এবং ড্যানিয়েল আরানজুবিয়া। সুযোগ চলে আসে বোনোর সামনে। সে বছরের ২৪ জুলাই অ্যাটলেটিকোর প্রথম গোলকিপার হিসেবে অভিষেক হয় বোনোর। প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচে ১-০ জেতে অ্যাটলেটিকো। সেপ্টেম্বরেই বোনোকে লোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লা লিগার আরেক ক্লাব রিয়াল জারাগোজাতে। সেখানেও প্রথম গোলকিপার হিসেবে শুরুতে সুযোগ পাননি। ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে অবশেষে অভিষেক হয়। সেই মৌসুমে ১৬টি ম্যাচে খেলেন তিনি।

২০১৬ সালে বোনো যোগ দেন জিরোনায়। চার বছরে দলের হয়ে ৮৩টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। জিরোনাতে খেলার সময় ভারতে আসেন বোনো। ২০১৯ সালে কেরালার কোচিতে আয়োজিত হয়েছিল লা লিগা বিশ্ব সিরিজ। সেখানে জিরোনার হয়ে মেলবোর্ন সিটির বিরুদ্ধে খেলেছিলেন বোনো। তবে কেরালার বিরুদ্ধে নামেননি তিনি। সে বছরই লা লিগার দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যায় জিরোনা।

২০১৯ সালে লোনে সেভিয়ায় যোগ দেন বোনো। ঘরোয়া কাপে ক্লাবের হয়ে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই খেলতে থাকেন তিনি। সেবার সেভিয়া ইউরোপা লিগ জেতে। বোনোর পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে রাউল জিমেনেজের একটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে দেন। পরের ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ছ’টি গোল বাঁচিয়ে দলকে জিততে সাহায্য করেন। তার পরে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে রোমেলু লুকাকুর একটি শট বাঁচিয়ে দেন। বছর দুয়েক আগে রিয়াল ভায়াদোলিদের একটি ম্যাচে গোল করেন বোনো। দল ১-১ ড্র করে।

কানাডা বা মরক্কো, যেকোনও দেশের হয়ে খেলার অধিকার ছিল বোনোর। তিনি বেছে নেন মরক্কোকেই। ২০১২ অলিম্পিক্সে মরক্কোর অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ছিলেন। গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে মরক্কোর দলে ছিলেন বোনো। তবে খেলার সুযোগ পাননি। ২০২১ সালের আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সে বিতর্কে জড়ান বোনো। গোটা প্রতিযোগিতায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আরবি ভাষায়।

স্পেনের ফুটবলাররা হয়তো সত্যিই হাজারটি পেনাল্টি মারার অনুশীলন করে নেমেছিলেন। তবে বোনোর কাছে ধ্বংস হয়ে গেল তাদের সাম্রাজ্য। সূত্র: স্পোর্টস্টার, এনবিসি, দ্য ন্যাশনাল নিউজ, বিইন স্পোর্টস, দ্য গার্ডিয়ান, টরোন্টো স্টার, স্পোর্টিং নিউজ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন