পিএনএস ডেস্ক: প্রথম আলাপের সময় ওয়াসিম আকরামকে চিনতেনই না তার অস্ট্রেলীয় স্ত্রী শানিরা। আকরাম যে জনপ্রিয় খেলোয়াড়, তাও বিশ্বাস করতে চাননি। যদিও শানিরাকে হয়তো বিয়ে করা হতো না আকরামের। আগেই তিনি খুন হয়ে যেতে পারতেন। আকরামকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন আর এক ক্রিকেটার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন আকরাম। প্রাক্তন অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘'একজন তরুণ ফাস্ট বোলার সব সময় চায় পূর্ণ গতিতে বল করতে। ১৯৯৮ সালের বার্বাডোজ টেস্টেও জোরে বল করছিলাম। ব্যাটার ছিল ভিভ রিচার্ডস। দিনের শেষ ওভারে রিচার্ডসকে একটা বাউন্সার দিয়েছিলাম। বল তার টুপিতে লেগেছিল। টুপি খুলে যায়। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রিচার্ডস আমাকে বলেছিল, ‘আমাকে বাধ্য করো না। তোমাকে খুন করে ফেলব আমি।’ কথাটা শুনে মিড অনে ছুটে গিয়েছিলাম অধিনায়ক ইমরান খানের কাছে। বলেছিলাম, রিচার্ডস আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ইমরান বলেছিল, ‘কিচ্ছু হবে না। আমি তো আছি। যাও তুমি রিচার্ডসকে আরো একটা বাউন্সার করো।’ সেই মতো আমি আবার একটা বাউন্সার দিয়েছিলাম। ওভারের শেষ বলটা রিচার্ডসের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট ভেঙে দিয়েছিল। খুব আনন্দ হয়েছিল আমার। তখন মাত্র দুটি খারাপ শব্দ জানতাম। রিচার্ডসের সামনে গিয়ে নাচতে নাচতে ওই দুটি শব্দই তাকে বলেছিলাম।’’
কী হয়েছিল তার পর? রিচার্ডস কিছু বলেননি? আকরাম বলেছেন, ‘তখন আমি বেশ ছোট। কত আর বয়স হবে। ২০-এর মতো। খেলা শেষ হওয়ার পর সাজঘরে গিয়ে জুতা খুলছিলাম। তখন একজন সহায়ক এসে আমাকে ডাকে। বলে, সাজঘরের বাইরে আমাকে কেউ ডাকছেন। দরজার কাছে গিয়ে দেখি, বাইরে রিচার্ডস দাঁড়িয়ে রয়েছে খালি গায়ে। হাতে একটা ব্যাট। তখনো প্যাড খোলেনি। ওই অবস্থায় তাকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমাকে সত্যিই মেরে ফেলবে। ভয়ে দৌড়ে চলে যাই ইমরান ভাইয়ের কাছে। অধিনায়ককে বলেছিলাম, বাইরে রিচার্ডস দাঁড়িয়ে আছে। লড়াই করতে এসেছে। ইমরান ভাই আমাকে বলে, ‘যাও লড়াই করো। এটা তোমার লড়াই।’ তার পর রিচার্ডস অবশ্য আর কিছু করেননি। বরং তার সাহসী বোলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন। তাতে ভয় কেটে গিয়েছিল আকরামেরও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের মজার ঘটনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের একটি মজার কথাও বলেছেন তিনি। স্ত্রী শানিরার প্রথম সাক্ষাতের দিনের কথা বলেছেন আকরাম। তিনি বলেছেন, ‘'প্রথম আলাপের সময় ওর বয়স ছিল ২৬-২৭-এর মতো। এক বন্ধুর বার্বিকিউতে প্রথম দেখা হয়েছিল। আমার সম্পর্কে কিছুই জানত না। ওকে বলেছিলাম, ‘দেশে কিন্তু আমার বেশ পরিচিতি রয়েছে।’’ শুনে শানিরা বলেছিল, ‘তাই নাকি।’’’
তা হলে আপনার সম্পর্কে প্রথম ধারণা তৈরি হলো কী করে? আকরাম বলেছেন, ‘‘ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে তার ধারণা কিছুটা বদলায়। বাড়ি ফেরার সময় শানিরাকে ট্যাক্সিতে তুলতে গিয়েছিলাম। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের বেশির ভাগ চালক পাকিস্তানি বা ভারতীয় ছিল। তারা আমাকে চিনতে পেরে কাছে চলে এসেছিলেন। আমাকে ঘিরে ট্যাক্সি চালকদের উৎসাহ দেখে ও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল, আমার কিছুট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার পর হেসেও ফেলেছিল।’’
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলার একটি মজার অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন আকরাম। ব্রিসবেনে একটি টেস্টের কথা বলেছেন সাবেক অলরাউন্ডার। তিনি বলেছেন, ‘তখন আমি এখানকার তিন-চারটি খারাপ শব্দ জানতাম। গাব্বায় খেলা হচ্ছিল। ওখানকার কুখ্যাত স্ট্যান্ড বে ১৩-এর দর্শকেরা প্রায় ৩০ মিনিট ধরে আমার নাম ধরে চিৎকার করছিল। মনে হয়েছিল, আমার প্রশংসাই করছে তারা। পরে আমাদের অধিনায়ক বুঝিয়ে দেন তারা আসলে আমাকে কী বলতে চাইছিলেন। অবশ্যই তারা আমার সম্পর্কে ভালো কিছু বলছিল না।’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
পিএনএস/আনোয়ার
আকরামকে খুনের হুমকিদাতার কাছে পাঠিয়েছিলেন ইমরান!
02-12-2023 10:36AM