পিএনএস ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে টিকতে না পেরে তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে চুপিসারে দেশ থেকে পলায়ন করেন সদ্য সবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে অটোমেটিক মন্ত্রিসভারও পতন ঘটে। একদিন পর, আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে জাতীয় সংসদও বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু।
রাষ্ট্রপতি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা আগামীর বাংলাদেশ পরিচালনা করবেন এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের জোর আওয়াজ উঠেছে। দেশের দুই শীর্ষ ক্রীড়া ফেডারেশন এবং বোর্ডে দীর্ঘদিন ধরে বসে থাকা দুই সভাপতির বিষয়ে কী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? কিংবা কোনো পরিবর্তন আনা হবে কি না- এ নিয়ে অনেক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে সাবেক ক্রীড়া সংগঠক, বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে একদল সংগঠক বিসিবিতে যান আজ এবং দাবি তোলেন সৎ ও যোগ্যদের দিয়ে বিসিবি পুনর্গঠনের জন্য। এছাড়া একটি মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়- বিসিবি থেকে অযোগ্য, অসৎ নেতৃত্বকে সরিয়ে সৎ ও যোগ্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।
সমস্যা হলো, চাইলেই বিসিবি এবং বাফুফেতে হুট করে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। কারণ, বিসিবি, বাফুফে এবং বিওএ (বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন) তিনটি সংস্থার ওপর সরকার নয়, খবরদারি করার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট খেলার আন্তর্জাতিক সংস্থার।
শ্রীলঙ্কা গত বছর সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী আদালতের মাধ্যমে দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) নির্বাচিত কমিটিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। পরে আদালতের রায় বাতিল করে পুনরায় নির্বাচিত কমিটিকে দায়িত্বে ফিরিয়ে এনে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছিল দেশটি।
বাংলাদেশেও চাইলে হুট করে নির্বাচিত কমিটি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সদ্য বিলুপ্ত মন্ত্রিসভার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে তারও মন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচিত কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি এখনও বিসিবির শীর্ষ দায়িত্বে রয়েছেন।
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর চতুর্থ মেয়াদে চার বছরের জন্য বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন পাপন। ২০২৫ সালের ৫ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হবে বিসিবির বর্তমান নির্বাচিত কমিটির। আইসিসির নিয়ম অনুসারে বিসিবিতে নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে হলে আরও অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের যেভাবে পতন হয়েছে এবং যেভাবে দলটির মন্ত্রী-এমপিরা দেশ ছেড়ে পলায়ন করছেন, তাতে বর্তমান নির্বাচিত কমিটি আগামী এক বছর বিসিবির দায়িত্ব পালন করতে পারার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
আজ বিসিবিতে আসা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আইসিসির নিয়ম আছে, আমাদের সরকারেরও নিয়ম আছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এই মুহূর্তে বিসিবিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভারতেও সরকার পরিবর্তনের সাথে তাদের বোর্ডেও পরিবর্তন আসে। এটা সরকার করতে পারে আইসিসিকে জানিয়ে।’
বাবু, সেই প্রক্রিয়ায়ই বিসিবির বর্তমান কমিটি পরিবর্তন করে নতুন নির্বাচিত কমিটির হাতে বিসিবির দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিসিবির যখন এ অবস্থা, তখন বাফুফেতেও পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। ২০০৮ সাল থেকে চার মেয়াদে বাফুফে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। সরকারের পরিবর্তনের সাথে কী বাফুফেতেও পরিবর্তন আনা হবে? কিংবা অনেক জায়গা থেকে পরিবর্তন করার আওয়াজও উঠছে।
মূলত বাফুফেতে সরকার কোনো প্রক্রিয়ায়ই পরিবর্তন আনতে পারবে না। ফিফার অনুমোদন দেওয়া বাফুফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমেই ফেডারেশনটিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। অন্যথা, ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল বাফুফের আগের কমিটি (আওয়ামী লিগ সরকারের আমলের কমিটি) বাতিল করে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ফিফা সঙ্গে সঙ্গে বাফুফেকে বহিষ্কার করে। দ্রুত ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল বাফুফের কমিটি পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেন।
এবারও তেমন কিছু করা যাবে না। যদিও বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী অক্টোবরেই। বাফুফের বর্তমান নির্বাহী কমিটি আগেই অক্টোবরে নতুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে রেখেছে। অর্থাৎ, এমনিতেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ আর দু মাস মাত্র। এরপর নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারাই আসবে দায়িত্বে।
এই নির্বাচনেও যদি কাজী সালাউদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচিত হন, তাহলে কোনোভাবেই তাকে সরানো যাবে না। পরের চার বছর তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। আর যদি তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তাহলে তিনি আসবেন না আর।
যারা নির্বাচিত হবেন, তাদেরই বাফুফের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সুতরাং, অক্টোবর পর্যন্ত বাফুফেতে পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রসঙ্গত আগের চারবারই নির্বাচিত হয়েই বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সালাউদ্দিন।
বিসিবি এবং বাফুফের মতো বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নির্বাচিত কমিটির বিষয়েও একই নির্দেশনা। সরকারি হস্তক্ষেপে কমিটিতে হাত দেওয়া যাবে না। তাহলে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বিওএ’র ওপর।
প্রসঙ্গত সিস্টেমেটিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিওএ’র সভাপতির পদ দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর প্রধানকে। বিওএতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মহাসচিব পদে। বর্তমান মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ শাহেদ রেজা।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
শেখ হাসিনার পতন: বিসিবি-বাফুফেতে কী হবে পাপন-সালাউদ্দিনের?
06-08-2024 10:09PM