চিকিৎসাসেবা দেবে কিশোর বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত রোবট

  30-05-2021 01:30AM

পিএনএস ডেস্ক : ডাক্তার বা রোগী যত দূরত্বেই থাকুক সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রোবট উদ্ভাবন করেছে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভ কর্মকার। তার রোবট চিকিৎসাসেবায় অবদান রাখার পাশাপাশি রোগীর অক্সিজেন সেচ্যুরেশন কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন করে ১৫-২০ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। একই সঙ্গে ওষুধ আনা-নেওয়া, অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেওয়া, রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ সরবারহ করা, সংক্রমিত রোগীর বর্জ্য তার শরীরে থাকা ইউভি রশ্মির মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে পারবে। নতুন উদ্ভাবিত এ রোবটের নাম ‘সেবক’।

চিকিৎসাকেন্দ্রিক কাজ করবে বলে সেভাবেই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান শুভ কর্মকার। তার মতে, চিকিৎসাক্ষেত্রে সরাসরি সহযোগিতার জন্য এ প্রচেষ্টা।

‘সেবক’ শুভ কর্মকারের দ্বিতীয় উদ্ভাবন। এর আগে ২০১৮ সালে জগদ্বিখ্যাত রোবট সোফিয়া যখন বাংলাদেশ ভ্রমণে আসে তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্ভাবন করে রোবট ‘রবিন’। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবে নাগরিকত্ব পাওয়া সোফিয়া শুধুমাত্র ইংরেজিতে কথা বলতে পারলেও ওই সময়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভ কর্মকারের উদ্ভাবিত ‘রবিন’ বাংলায় কথা বলতে পারত; প্রশ্নোত্তরে অংশ নিতে পারত। ফলে রবিন দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুরো দেশবাসীর।

শুভ বলেন, রবিন মানবাকৃতির রোবট। কোথাও আগুন লাগলে বা গ্যাস লিকেজ হলে সংকেত পাঠাতে পারতো। কিন্তু দেশসহ সারা বিশ্ব একটি সংক্রমণের সাথে লড়াই করছে। এক্ষেত্রে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি- এমন প্রশ্ন থেকেই দ্বিতীয় রোবট ‘সেবক’ প্রকল্পে হাত দেই। তিন মাসের প্রচেষ্টায় একটি মডেল বাস্তবায়ন করেছি।

‘মডেল বলতে আমি বোঝাতে চাই, এমনভাবে একটি রোবট তৈরি করা হলে সে প্রকৃতপক্ষেই ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হয়ে কাজ করতে পারবে। ‘সেবক’ সরাসরি রোগীর কাছের যেতে পারবে। তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে খাটিয়ে সঙ্গহীন রোগীকে সঙ্গ দিতে পারবে।

ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাক্তার বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক রোগীর সর্বশেষ অবস্থা সরাসরি দেখতে পারবেন, রোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং প্রেসক্রিপশন দিতে পারবেন বলে জানান শুভ কর্মকার।
শুভ আরও বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ডাক্তার এবং রোগী ফোনে কথা বলতে পারেন। কিন্তু করোনায় সংক্রমিত রোগীর কাছে কেউ সহসাই যেতে চায় না। এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে সেবক।

কারণ কোনো রোগীর অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে তার কাছে সংরক্ষিত পানি ভেঙে রোগীকে অক্সিজেন সরবারহ করতে পারবে। এছাড়া রোগীর বর্জ্য রোবট সেবকের শরীরে থাকা ডাস্টবিনে ফেলা হলে ইউভি রশ্মির মাধ্যমে তা জীবাণুমুক্ত করে ফেলবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি নেই।

রোবট ‘সেবক’ বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন করা হলে করোনা মোকাবেলা সহজ হবে। রোগী তার প্রয়োজনীয় সেবা পাবে আবার চিকিৎসকও নিরাপদ দূরত্বে থেকে চিকিৎসা দিতে পারবেন।

জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শুভ কর্মকার। তার পিতা সন্তোষ কর্মকার। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় শুভ। গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় শহরের অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ে। কিন্তু তার আফসোস, ভর্তির পর একদিনও শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেননি। মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় তার এ প্রতিবন্ধকতা। সেই সুবাদে নিজের রোবট নিয়ে কাজ করার বিস্তর সুযোগ হয়েছে।

শুভ বলেন, ভবিষ্যতে আমি শুধু রোবট নিয়েই কাজ করতে চাই। রোবটিক্স আমার প্রিয় বিষয়।

রোবট উদ্ভাবন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই উল্লেখ করে বলেন, আমার প্রথম উদ্ভাবিত রোবট রবিনের প্রযুক্তি আরো আধুনিক ও উন্নত করতে কাজ করছি। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্কালে বিশ্বের অনেক দেশ রোবটিক্স ওয়ার্কে অনেক এগিয়ে গেছে। রোবট হয়ে উঠেছে উত্তম বন্ধু। কিন্তু বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আমি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ যেন রোবট বা কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে পারে সেজন্য কাজ করছি। আমি মানব হিতৈষীমূলক রোবট উদ্ভাবন করতে চাই।

২০১৮ সালের ১৫ মে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের উদ্ভাবন বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন রবিনের উদ্ভাবক শুভ কর্মকার। ২০১৯ সালের ২৭ জুন ৪০তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাত থেকে পুরস্কার নেন। এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৯ এ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ১ম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত থেকে ‘বছরের সেরা মেধাবী’ পুরস্কার নেন শুভ কর্মকার। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় রোবট উদ্ভাবন করলেন এই কিশোর বিজ্ঞানী।

প্রসঙ্গত, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরও দুজন ছাত্র দুটি রোবট উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে পালপাড়ার সুজন পালের উদ্ভাবিত ‘বঙ্গ’ ও ভদ্রপাড়ার শাওন সরদার সোলাইমান উদ্ভাবন করেন ‘মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন