ক্রিপ্টোর চূড়ান্ত মূল্য শূন্যে নেমে আসতে পারে

  28-11-2022 05:12PM

পিএনএস ডেস্ক : কয়েকমাস আগেও ক্রিপ্টো ইন্ড্রাস্ট্রির বাজার ছিল রমরমা। কিন্তু হঠাৎ করেই পতনের শব্দ শোনা যাচ্ছে এ খাতে। সবকিছু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের পর এ খাতে রেকর্ড পতন হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি এফটিএক্সের বিপর্যয়ের পর ক্রিপ্টোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান সতর্ক করে বলেছেন, বিটকয়েন ও ক্রিপ্টো ইন্ড্রাস্ট্রিতে পতন নেমে আসতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর মান শূন্যেও নেমে আসতে পারে। ‘ক্রিপ্টোর চূড়ান্ত মূল্য শূন্যে নেমে আসে পারে’ শিরোনামে গত রোববার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি মতামতধর্মী কলাম লিখেছেন অ্যান্ডি কেসলার। তিনিও ক্রিপ্টো ইন্ড্রাস্ট্রির পতন নিয়ে সতর্ক করেছেন।

অ্যান্ডি কেসলার বলেছেন, প্রযুক্তিখাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে লেভারেজড বাইআউটের (ঋণ গ্রহণ করে কোম্পানি অধিগ্রহণ) উদাহরণ খুব একটা নেই। তার কারণও আছে। সেটা হলো, প্রযুক্তি যখন কাজ করে, তখন তার শেয়ারের মূল্যও থাকে ঊর্ধ্বমুখী। গুগলের ক্ষেত্রে কখনই লেভারেজ বাইআউট হবে না। কিন্তু প্রযুক্তি যখন পরবর্তী নতুন জিনিসের দিকে এগিয়ে যায়, লেভারেজড বাইআউটের ঝুঁকি থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি এফটিএক্স, ইলন মাস্ক ও সফট ব্যাংক--- এখন সেই শিক্ষাটাই পাচ্ছেন।

৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার ক্রয় করেছেন ইলন মাস্ক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, এ জন্য নিজ কোম্পানির শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি ঋণও নিয়েছেন তিনি। অ্যান্ডি কেসলার লিখেছেন, ২০১৯ সালেও লাভবান কোম্পানি ছিল টুইটার। কিন্তু বছরে তাদের ঋণ এখন ১ বিলিয়ন ডলার। ইলন মাস্কও তার কর্মীদের বলেছেন, দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি টেসলার শেয়ার (এখন টেসলার শেয়ারেরও দামও কমছে) উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি টেসলার আরও ৪ বিলিয়ন ডলার শেয়ার বিক্রি করেছেন, সবমিলিয়ে ১৯ বিলিয়নের বেশি। মাস্ক বলেছেন, বাক স্বাধীনতা থাকবে টুইটারে। কিন্তু তিনি টুইটার কেনার পর বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটার ছেড়ে পালাচ্ছে, কর্মীরাও চাকরি ছাড়ছে গণহারে। যদি মাস্ক দেউলিয়া হন, টুইটার ছেড়ে দেন তাহলে টুইটারের নিলামে তোলার মতো থাকবে শুধু কিছু পুরনো কোড ও প্লাস্টিকের নীল পাখি (টুইটারের প্রতীক নীল রঙের পাখি)।

প্রযুক্তি এবং ঋণের সমন্বয়ের ফলটা ভালো হয় না। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা উদাহরণও তুলে ধরেছেন লেখক। তিনি বলেছেন, এই ক্ষেত্রে নতুন উদাহরণটা হলো স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রাইড। তার এফটিএক্স এবং আলামেডা কোম্পানি গ্রাহকদের সম্পদের অপব্যবহার করেছে। তাদের মূল দোষটা হলো তারা নিজস্ব এফটিটি টোকেনের বিপরীতে ঋণ নিয়েছিল, সেই টোকেন -- সত্যি বলতে গেলে যার কোনো মূল্য নেই, এসব টোকেন হলো বাতাসের মতো। এখন তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।

এফটিটি টোকেনের ব্যবসা এমনভাবে করা হয়েছিল যে এফটিএক্স এসব টোকেনের যেকোনো মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু চিরতরে এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রাইডের মালিকানাধীন এফটিএক্স এবং আলামেডা টোকেনগুলির বিপরীতে ঋণ নিয়েছিল। তারা নিজেরাই এ বিষয়ে কারসাজি করেছে। তারা ভেবেছিল, এফটিটির দাম চিরকাল ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। তাই তারা প্রায়শই ইচ্ছমতো বিনিয়োগ করেছে। এফটিএক্স কর্মচারী, বিক্রেতাদের টোকেনে বেতনও দিয়েছে। বাজারে তাদের মূলধন ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার এবং এখন নেমে দাঁড়িয়ে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারে।

অনিয়ম করে সবসময় পার পাওয়া যায় না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবেই। কল্পনার রঙিন বুদবুদকে ফাটিয়ে দিতে একটি পিনই যথেষ্ট। কয়েনডেস্ক এফটিটি টোকেন সম্পর্কিত আলমেদার ব্যালেন্স শিটের একটি অনুলিপি ফাঁস করার পর বিনান্সের (বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিনান্স) সিইও চ্যাংপেং ঝাও বিক্রি শুরু করে। এফটিটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ২২ ডলার থেকে ৩ ডলারের এর নিচে নেমে আসে। এফটিএক্স/আলমেদার কাছে ১৫ বিলিয়ন ঋণের বিপরীতে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। ফলে তাদের অনেক ঋণ বকেয়া থাকতে পারে। এসব ঋণ পরিশোধের জন্য বিক্রির মতো সম্পদের পরিমাণও সামান্য। তাই কে কী পাবে তা নির্ধারণ করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।

২০২০ সালে যখন সফটব্যাংক (টোকিও ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি) ঋণ করে প্রযুক্তিখাতে শেয়ার কিনে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এফটিএক্সে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা তারা কিছুই পায়নি। এমনকি ধারণা করা হয়, কোম্পানিটি তাদের প্রধান নির্বাহী মাসায়োশি সনের কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার পায়। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, ‘এ পাওনা পরিশোধে সন জামানত হিসাবে তহবিলে তার অংশীদারিত্ব এবং তার সফ্টব্যাঙ্কের নিজের অংশ দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন’। কিন্তু সেই তহবিলেরই কোনো কুলকিনারা নেই। ২০২১ সালের পর ব্যাংকের শেয়ারের মানও ৫০ ভাগ কমেছে।

অ্যান্ডি কেসলার প্রতীকীভাবে বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, দুধ ও কোমল পানীয়ের মিশ্রণ যেমন ঘটানো উচিত নয় তেমনি ঋণ ও প্রযুক্তি পাশাপাশি চলতে পারে না।

পিএনএস/এমবিবি

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন