অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসকের কান্না

  03-08-2021 03:19AM

পিএনএস ডেস্ক: কুমিল্লায় আক্সিজেনের অভাবে সোহেল আহমেদের (৩০) নামের একজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। লালমাই উপজেলার বাগমারা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জেলার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের ওড্ডা গ্রামে তার বাড়ি।

জানা যায়, পাঁচ মাস আগে কাতার থেকে দেশে আসেন সোহেল। ঈদুল আজহার দুদিন আগে হঠাৎ তাঁর জ্বর ও কাশি শুরু হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে থাকায় ঈদের পর কুমিল্লা পিপলস হাসপাতালে এক্স-রেসহ কয়েকটি পরীক্ষা করান। রিপোর্ট দেখে চিকিসৎকেরা করোনা হয়েছে বলে কিছু ওষুধ লিখে দেন।

কিন্তু, ওষুধে কোনো কাজ না হওয়ায় একজন পল্লি চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয় কুমিল্লার জাঙ্গালিয়ায় ন্যাশনাল হাসপাতালে। এক সপ্তাহ পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৩৭-এ নেমে আসায় ৩১ জুলাই দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোহেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় ন্যাশনাল হাসপাতালের ৩৪ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে পারলেও ঢাকায় নেয়ার মতো কোনো টাকা না থাকায় শনিবার বিকেলে সোহেলকে লালমাই উপজেলার বাগমারা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেন।

এ প্রসঙ্গে লালমাই উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও হাসপাতালের আরএমও ডা. আনোয়ার উল্যাহ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশনের অবস্থা দেখে ভর্তি না নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু, কুমেক হাসপাতালে সিট খালি না থাকায় বাগমারা হাসপাতালেই রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা করতে চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন সোহেলের মা ফিরোজা বেগম এবং স্ত্রী খাদিজা আক্তার। এরপর আরএমও’র সম্মতিতে সোহেলকে ভর্তি করিয়ে করোনা ইউনিটের সাত নম্বর বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা প্রদান শুরু করা হয়।

এদিকে, বাগমারা হাসপাতালের পাঁচটি খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার (৭.৫ কিউবিক মিটার) রিফিল করে বিকেল ৫টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছার কথা থাকলেও পৌঁছেনি। সন্ধ্যা ৭টায় হাসপাতালের অবশিষ্ট সেন্ট্রাল অক্সিজেনও শেষ হয়ে যায়। তখন সোহেলকে হাসপাতালের রিজার্ভে থাকা দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার (২ কিউবিক মিটার) দিয়ে অক্সিজেন সেবা অব্যাহত রাখা হয়। রাত ১২টার পর ওই দুটি সিলিন্ডারের অক্সিজেনও শেষ হয়ে যায়। তখনও রিফিল সিলিন্ডারগুলো হাসপাতালে পৌঁছেনি। সে সময় আরএমও অনুরোধ করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য দুজন রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে সোহেলকে অক্সিজেন সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

এরই মধ্যে রিফিল সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালমুখী স্পেকট্রা কোম্পানির গাড়িচালককে বার বার ফোন করা হয় সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু, রিফিল নিয়ে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় গাড়িচালক দুঃখপ্রকাশ করে জানান, বাগমারা পৌঁছাতে তাঁর আনুমানিক সকাল ৬টা বাজবে।

ভোররাত আনুমানিক পৌনে ৪টায় হাসপাতালে থাকা সব সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। কোনোভাবেই সোহেলকে অক্সিজেন সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অক্সিজেন নিতে না পেরে সোহেল ছটফট শুরু করেন। চোখের সামনে অক্সিজেনের জন্য রোগীর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে আরএমওসহ রোগীর স্বজন, অন্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা কান্না শুরু করেন। ভোররাত ৪টার দিকে সোহেল আহমেদ মারা যান।

করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রবিউল আলম বলেন, আরএমও স্যার এই রোগীর জন্য অক্সিজেন সংগ্রহ করতে অনেককে ফোন করেছেন। সারা রাত স্যার করোনা ইউনিটে ছিলেন। রিফিলের গাড়ি সময়মতো পৌঁছালে হয়তো রোগীর মৃত্যু হতো না। মৃত্যুর পর নিজ চেম্বারে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে বসে আরএমও স্যার প্রায় আধা ঘণ্টা কেঁদেছেন।

সোহেল আহমেদের স্ত্রী খাদিজা আক্তার জুলি বলেন, বাগমারা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আমার স্বামীকে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে চারটি সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। শুধু অক্সিজেনের অভাবে আমরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়েছি।

বাগমারা হাসপাতালের আরএমও ডা. আনোয়ার উল্যাহ বলেন, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু সহ্য করতে কষ্ট হয়েছিল। রাতে অক্সিজেন সংগ্রহের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলদেরও ফোন করেছি। অবশ্য রোগীর মৃত্যুর এক ঘণ্টা পর রিফিল সিলিন্ডারের গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছেছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন